ফেসবুকে নয়, রাজপথের আন্দোলনেই মুক্ত হবেন খালেদা জিয়া

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপি নেত্রী নয়, তিনি দেশের নির্ভরতার প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি বার বার এদেশের মানুষের ভালোবাসায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১/১১ সরকারের আমলে তাঁর অনমনীয় মনোভাবের কারণে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে এসেছিল। মাইনাস টু ফর্মুলা কার্যকর হয়নি। সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে নির্জন কারাগারে বন্দি রেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলন নয়, রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নেত্রীকে মুক্ত করে আনবো।

বিএনপি মহাসচিব শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর নুর আহমদ সড়কে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের সাড়ে ছয় মাসের মাথায় প্রকাশ্যে বড় কোন কর্মসূচি ছিল আজকের এই সমাবেশ।

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সারা দেশে ৯৫ হাজার মামলায় প্রায় ৭০ লাখ নেতাকর্মী আসামি। সব গায়েবি মামলা। মামলার কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। ঢাকার লোকজন চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের লোকজন ঢাকায় গিয়ে বসবাস করছেন। তারা অমানবিক জীবনযাপন করছেন। কেউ হকারের কাজ করছে, কেউ রিক্সা চালাচ্ছেন। জনগণ ও গণতন্ত্রকে ভয় পায় বলেই সরকার এই অবস্থা তৈরি করেছে। যাতে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে।

তিনি বলেন, বাজেটে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো লুট করে শেষ করে দিয়েছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি চলছে। মেগা লুটপাট চলছে। শেয়ারবাজার শেষ করে দিয়েছে। কোন জবাবদিহিতা নেই।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দিনের ভোট আগের রাতে নিয়ে ফেলা অস্বাভাবিক কাজ। অস্বাভাবিক ভোটের মাধ্যমে গঠিত এটি একটি অস্বাভাবিক সরকার। তাই তার সকল কাজই অস্বাভাবিক। দুদক চেয়ারম্যান সরল মনে দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করছেন, এটিও অস্বাভাবিক। বিচারকের সামনে খুন, অস্বাভাবিক। ঋণখেলাপিদের দায়মুক্তি দেওয়া অস্বাভাবিক। দেশে বন্যায় কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। দেশের প্রধানমন্ত্রী ১৮ দিনের সফরে ইউরোপে। মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিদেশ যাওয়াটাও অস্বাভাবিক।

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ।

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আইনিভাবে সাজা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। যে অভিযোগে তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে তার কোন প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। কারণ যে দুই কোটি টাকার মামলায় তিনি কারাভোগ করছেন সেই দুই কোটি ব্যাংকে সুদাসলে ছয় কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ইচ্ছায়, তার অবৈধ ক্ষমতাকে শক্ত রাখার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। আমরা গণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে কারামুক্ত করবো।

সাবেক মন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সাংবিধানিক সকল সংগঠনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। যে নুরুল হুদা নির্বাচন তত্ত্বাবধান করতে পারেন না তিনি যাচ্ছেন হজ তত্ত্বাবধানে। এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিশনের অধীনে আরেকটি নির্বাচন দিতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কারণ ৩০ ডিসেম্বর দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি, আগের রাতে সরকার নিজ দায়িত্বে নিজের জন্য ভোট কাস্ট করে নিয়েছেন। যা দেশের মানুষের পাশাপাশি সারা বিশ্ব দেখেছে।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপি এ দেশের মাটি ও মানুষের দল। এই দলকে নিঃশেষ করা যাবে না। আমাদের সংগ্রাম দেশের মানুষের জন্য, তাদের অধিকারের জন্য। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামকে ধন্য করেছেন। দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন এই চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলো। চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। আপনারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মো. নাছির উদ্দীন, আবদুল আওয়াল মিন্টু, গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরী, বিএনপির উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, ভিপি জয়নাল আবেদীন, ড. সুকোমল বডুয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক ফজু, বেগম রোজী কবির, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মৎস্য সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুনুর রশীদ ভিপি, সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, কক্সবাজার জেলার সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলার সভাপতি শাহ আলম, বান্দরবান জেলার সভাপতি সাচিং প্রু জেরী প্রমুখ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম সম্পাদক ইয়াসিন চৌধুরী লিটন ও সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!