ফেসবুকে চবি শিক্ষক জানালেন করোনা রোগী শনাক্তের ‘ধারণা’

বিশেষ মেশিনে ৩ ঘন্টায় ৯৬ জনের টেস্ট সম্ভব!

‘ব্যক্তি করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা’— তা শনাক্তে একটি পদ্ধতির কথা সামনে এনেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়া।

সোমবার (৩০ মার্চ) তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে করোনা রোগী শনাক্তের একটি ধারণার উল্লেখ করা হয়৤

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘ঔষধ আবিষ্কার সময়সাপেক্ষ বিধায় করোনা আক্রান্ত রোগীর বিজ্ঞ-চিকিৎসকগণ রোগীকে বাঁচাতে জরুরি চিকিৎসা হিসেবে এ এপ্রোচ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে পারেন। করোনা ভাইরাস (Covid-19) এ আক্রান্ত রোগীদের বাঁচানোর জন্য ১৮৯০ সালের এই এপ্রোচ (পদ্ধতি) আশির্বাদ হয়ে কাজ করতে পারে। এটাকে পরোক্ষ এন্টিবডি থেরাপি বলা হয়। পরোক্ষ এন্টিবডি থেরাপি নামকরণ হয়েছে। কারণ একজন ব্যক্তির শরীরে উৎপন্ন এন্টিবডি অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হয়।’

বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে এই শিক্ষক লিখেছেন, ‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত থেকে নিরাময় হয়ে উঠা ব্যক্তির ব্লাড-প্লাজমা বা ব্লাড-সিরাম নিয়ে (ভাইরাস ও অন্যান্য ইনফেক্সাস এজেন্ট স্কিনিংয়ের পর) আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করালে আক্রান্ত ব্যক্তি খুব তাড়াতাড়ি নিরাময় হয়ে উঠতে পারে। কারণ পূর্বে নিরাময় হয়ে উঠা ব্যক্তির ব্লাড প্লাজমা অথবা সিরামে এন্টি-কোভিড-১৯ এন্টিবডি উৎপন্ন হয়ে আছে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের প্রবেশ করালে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত নিরাময়ে দারুণ ভূমিকা রাখবে। এ ধরনের ব্লাড-প্লাজমা বা ব্লাড-সিরাম এপ্রোচের মাধ্যমে ১৯১৮ সালে এইচ ওয়ান এন ওয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মহামারীতে ১৭০০ আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, যদিও তখন বর্তমান সময়ের তুলনায় জ্ঞানের ব্যপ্তি কম থাকায় কোন উপসংহারে আসা যায়নি।

ড. রবিউল হাসান ভূইয়া লিখেছেন, ‘২০০২-০৩ সালে সার্স (SARS) আউটব্রেকের সময় আক্রান্ত ৮০ ব্যক্তির ওপর একই ভাবে আক্রান্ত থেকে নিরাময় হয়ে উঠা ব্যক্তির ব্লাড-সিরাম প্রয়োগ করে হংকং। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত নিরাময় হয়ে উঠে। তাছাড়া ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এ পদ্ধতির মাধ্যমে কিছু সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। (সুতরাং) রোগীর জীবন বাঁচাতে জরুরী চিকিৎসা হিসেবে পরোক্ষ এন্টিবডি থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে, এবং এপ্রোচটির ধারণা চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছা জরুরি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়া।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়া।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নির্ণয়ের সঠিক পরীক্ষা করা হয় রিয়েল-টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) এর মাধ্যমে। এ মেশিনে প্রতি ৩ ঘন্টায় ৯৬ জনের স্যাম্পল টেস্ট করা যায়। আমরা যারা মলিকুলার বায়োলজি সম্পর্কিত গবেষণা করেছি তারা সবাই আরটি-পিসিআর মেশিনের সাথে সুপরিচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে আরটি-পিসিআর মেশিন আছে। সরকারের অনুমতি পেলে যথাযথ নিরাপত্তা নিয়ে স্ব-স্ব ল্যাবে করোনা নির্ণয়ের পরীক্ষা করে জাতির এ দুর্যোগে অবদান রাখার সুযোগ পাবো এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত বিচ্ছিন্ন করে বাকি সবাইকে নিরাপদ রাখা যাবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!