ফের প্রতারণায় পারভীন আক্তার/ স্বীকৃতির অফিসে তালা

স্বীকৃতির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একজনকে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে ফের প্রতারণা শুরু করেছেন পারভীন আকতার। কখনো ম্যাজিস্ট্রেট কখনো এনজিওর নির্বাহী পরিচালক পরিচয় ধারণ করে প্রতারণার জাল বোনা সেই পারভীন আক্তারের নতুন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বাসার মালিক। বাসা ভাড়া পরিশোধ না করা, কর্মী নিয়োগে জামানতের নামে টাকা গ্রহণ, প্রতারণার আশ্রয় নেয়াসহ নানা বিষয় বাসার মালিকের নজরে আসায় চট্টগ্রামের জাকির হোসেন রোডের বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন করে কর্মী নিয়োগের নামে তৃপ্তি সেন নামে এক এনজিও কর্মীর কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা জামানত গ্রহণ করে পারভীন। কাজ শুরুর কয়েকদিনের মাথায় নতুন কর্মস্থলের এমন প্রতারণার খবরে হতবিহ্বল ওই কর্মী। সুদের উপর ঋণ করে জামানত হিসেবে দেওয়া বিশ হাজার টাকা আদৌ ফেরত পাবে কিনা এই নিয়ে ওই কর্মকর্তা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

জানা গেছে, গত ৪ জুলাই চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক দৈনিকে কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় পারভীন আক্তার। স্বীকৃতি এনজিওর নামে ম্যানেজার এবং ফিল্ড অফিসার পদে দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গত ৭ জুলাই এমইএস কলেজ গেটের পাশ্ববর্তী হালদি রেস্টুরেন্ট বিল্ডিংয়ে লিখিত পরীক্ষাও নেয়া হয়।

ওই পরীক্ষায় প্রায় ১০ জন অংশ নিলেও নিয়োগ দেওয়া হয় তৃপ্তি সেন নামে এক কর্মীকে।

নিয়োগপ্রাপ্ত তৃপ্তি সেন জানান, ফিল্ড অফিসার পদে আবেদন করা হলেও তাকে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগদানের আগে জামানত হিসেবে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন পারভীন আক্তার। ওই টাকা গ্রহণের সময় কোন ডকুমেন্ট প্রদান করেনি এনজিওর পক্ষ থেকে। নিয়োগ দেওয়ার আগে পারভীন আক্তার তাকে জানায় স্বীকৃতি এনজিও চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিসহ মোট ১৭ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা করছে। তাকে মাঠ পর্যায়ের কাজ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। তবে এখনো পর্যন্ত কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বলে জানান তৃপ্তি সেন।

তিনি আরো জানান, সুদের উপর ঋণ নিয়ে জামানত হিসেবে ২০ হাজার টাকা দিই। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে বাসার মালিক এসে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এই অবস্থায় তার টাকা আদৌ ফেরত পাবেন কী না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

স্বীকৃতি এনজিওর সাথে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে এক সময়ে সম্পৃক্ত থাকা মিজানউল্লাহ সমরকন্দি জানান, স্বীকৃতি এনজিওর মাধ্যমে বেকার যুবকদের কাছ থেকে জামানত দরিদ্র লোকদের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে সেই টাকা আত্মাসাত করেছে পারভীন আক্তার। ওই প্রতারণায় তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না দাবি করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, নতুন করে প্রতারণার শুরু করার কারণে তিনি স্বীকৃতির নতুন অফিসে গিয়ে ওই বাসার মালিক নুরুল হকের কাছে পারভীন আক্তারের প্রতারণার বিষয়টি তুলে ধরেন। পরবর্তীতে বাসা ভাড়া পরিশোধ না করা এবং প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার কারণে স্বীকৃতি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন নুরুল হক।

মিজান উল্লাহ আরো বলেন, আমি চাই পারভীন আক্তারের প্রতারণার খপ্পরে আমি পড়েছি আর কেউ না পড়ুক। সেজন্য নতুন করে তৃপ্তি সেন নামে এক কর্মী প্রতারণার শিকার হওয়ার খবর পেয়ে নিজ উদ্যোগে বাসার মালিকের সাথে কথা বলে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওযার ব্যবস্থা করেছি। পারভীন আক্তার তাকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছে বলে দাবি করেন মিজান উল্লাহ।

স্বীকৃতি এনজিওর বিল্ডিং এর মালিক নুরুল হক বলেন, মাসিক ১৬ হাজার টাকায় অফিসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়েছিলো পারভীন আক্তার। প্রায় দেড় মাস হয়ে গেলেও ভাড়া এবং অ্যাডভান্স ( অতিরিক্ত মাসের ভাড়া) না দেওয়ায় বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নুরুল হক বলেন, ‘ওই নারী আমাকে বিপদে ফেলে দিলো।’

এ বিষয়ে স্বীকৃতির এনজিওর নির্বাহী পরিচালক পারভীন আক্তার বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে এক সময় জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মকত ছিলো মিজান উল্লাহ সমরকন্দি। ৩ লাখ টাকা আত্মসাত করার কারণে তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অফিসে তালা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে এই প্রতিবেদককে তার বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশনের জন্য অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তথ্যমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে প্রতিবেদক এবং পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করারও হুমকি দেয় পারভীন আক্তার।

প্রসঙ্গত : স্বীকৃতি এনজিওর নাম দিয়ে চট্টগ্রাম নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের থেকে জামানতের নামে টাকা গ্রহণ এবং দরিদ্র লোকদের কাছ থেকে সঞ্চয় গ্রহণ করে সেই টাকা আত্মাসাত করে পারভীন আক্তার। আবার কখনো কখনো ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বিভিন্ন স্থানে প্রতারণার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

এসসি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!