ফুল-ফলের অপূর্ব সমারোহ বৃক্ষমেলায়

চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে শুরু হওয়া বৃক্ষমেলা এখন আর শুধু কেনার জায়গা নয়—এটি পরিণত হয়েছে বিনোদনের জায়গায়। বর্তমানে ছাদবাগান জনপ্রিয়তা পেলেও শহরের বাসা-বাড়িতে ব্যালকনি কিংবা বারান্দায়ও শোভা পায় বাহারি সব ফুল ও ফলের গাছ। বৃক্ষমেলায় এসবের চাহিদাই বেশি।

শনিবার (১৩ জুলাই) শুরু হওয়া ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা চলবে আগামী ২৭ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বৃক্ষপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর থাকছে মেলা প্রাঙ্গণ।

চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা।
চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা।

চন্দ্রনগর থেকে বৃক্ষমেলায় অংশ নিতে এসেছেন মোশাররফ আলী। চন্দননগর বনফুল নার্সারির মালিক তিনি। তিনি জানালেন, বৃক্ষমেলা উপলক্ষে নাকাচুয়া নামের একটি জাপানি গাছ এনেছেন। এই গাছ এমনিতে খুব একটা পাওয়া যায় না। ক্রিসমাস ট্রির মতো চমৎকার আকার নিয়ে বেড়ে ওঠে গাছটি।

বনসাই বাড়ি কেবল বনসাই নিয়েই অংশ নিয়েছে মেলায়। এখানে ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকার বনসাই পাওয়া যাচ্ছে। পুষ্প নার্সারি নজরকাড়া সব রঙের ফুলের বাহার নিয়ে সাজিয়েছেন স্টল। স্টলের বিক্রেতা জানালেন, সর্বনিম্ন ১৫-২০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রকম চারা। সবুজ চট্টগ্রাম নিয়ে এসেছেন রংবেরঙের অর্কিডের সম্ভার। বিক্রেতা গোলাম হোসেন জানালেন, ঘর সাজানোর জন্য এসব চারার প্রতি মানুষের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা।
চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা।

এর মধ্যেই ড্রামে লাগানো সাদা চন্দনের গাছের দাম ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে গাছ বিক্রি করে ফেলেছেন প্রায় ২০ হাজার টাকার। এ ছাড়া চারা রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। ১০০ টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব চারা।

ইনডোর প্ল্যান্ট ও হরেক জাতের রঙবেরঙের ক্যাকটাস রয়েছে মেলায়। বিশাল আকৃতির চাইনিজ বটের বনসাই বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ লাখ টাকায়।

আমের পাশাপাশি জাম্বুরা, ডালিম, থাই আমলকী, চায়না লেবুর গাছ কিনছেন অনেকেই। কমলা গাছ ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আম্রপলি, ব্যানানা ম্যাংগোসহ আরও নানা জাতের আমের চারা ও গাছ রয়েছে মেলায়। দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু। গোলাপ গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

গোলাপের পাশাপাশি কামিনী, গাঁদা, জারবেরা, রঙ্গন, কাঠ গোলাপ, করবী গাছ রয়েছে। ফলদ বৃক্ষের মধ্যে বিলাতি গাব, লাল কাঁঠাল, স্ট্রবেরি পেয়ারা, থাইল্যান্ডের ডুরিয়ানের মতো বিদেশি ও হাইব্রিড গাছের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা গেছে। মেলায় গাছের পাশাপাশি গাছ লাগানোর টব, ড্রাম, কীটনাশক, সার ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কিছু পাওয়া যাচ্ছে। এসব গাছের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের ওষুধের চারা। এসব চারা ৩০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার ভেতরে পাওয়া যাচ্ছে।

বৃক্ষপ্রেমী আব্দুল আলিম বলেন, শনিবার মেলা থেকে ২৫০ টাকায় তেজপাতা চারা, ২০০ টাকায় বরই, ২০০ টাকায় জলপাই, ৪০০ টাকায় লিচু এবং ৪০০ টাকায় অর্কিডের চারা কিনেছি। এসব গাছ বাসার ছাদে ও বারান্দার টবে রোপণ করবো। আজ আবার এসেছি কয়েকটা ওষুধের চারা কিনতে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে ছাদে কিংবা বারান্দায় টবে বা ড্রামে লাগানো যায় এমন চারাই পাওয়া যাচ্ছে বেশি। এ ছাড়া ক্যাকটাস, নানা জাতের পাতাবাহার, ফুল ও আলংকারিক চারাও পাওয়া যাচ্ছে। ফ্ল্যাট বাড়ির ব্যালকনি, বারান্দা কিংবা ড্রয়িং রুমে লাগানো যায় এসব। তাতে বাগান করার শখও মেটে, গৃহসজ্জাতেও আসে নান্দনিক বৈচিত্র্য।

বৃক্ষমেলায় কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্টল সাজিয়েছে বিদেশি নানা প্রজাতির গাছের চারা দিয়ে। কোনো কোনো স্টলে বিক্রি হচ্ছে বাগান পরিচর্যার নির্দেশিকা, বই-পুস্তক, মাটির টব ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। তাছাড়াও বন বিভাগের আকর্ষণীয় মডেলে পাহাড়, জনপদ, ঝুম লেক,মৎস চাষ, বিভিন্ন বাগান, কেবল কার, বন্যপ্রাণী, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাঁশ চাষ পদ্ধতি ও নির্মাণ কৌশল মডেল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফলদ প্রদর্শনী মেলায় আগত দর্শক ও ক্রেতাদের মুগ্ধ করেছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মো.জগলুল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শহুরে মানুষকে বৃক্ষের প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলতেই এই মেলার আয়োজন। এখানে দেশের প্রায় সব বৃক্ষ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। আছে চারা কেনার সুযোগ। শহরবাসীর প্রতি সুযোগটি কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!