ফুলেল ভালোবাসায় বাদলকে বিদায় জানালো চট্টগ্রাম

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানালেন তাঁর ’৭১র রণাঙ্গনের সতীর্থ ও রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের সুদীর্ঘ সময়ের সারথীরা। জানাজার ঘোষণা ছিল শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ২টায়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা পিছিয়ে নেওয়া হয় বাদ মাগরিব। ঢাকা থেকে বাদলের লাশ চট্টগ্রাম আসার আগেই জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ এলাকায় ভিড় জমাতে থাকেন তাঁর সতীর্থ, শুভাকাঙ্ক্ষী ও অনুসারীরা।

ছোট ছোট দলে লোকজন দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন বাদলকে নিয়ে। কেউ তাঁর ছাত্রজীবনের তুখোড় নেতৃত্ব, কেউ মুক্তিযোদ্ধা, আবার কেউ জাসদ নেতা বা সাংসদ বাদলকে নিয়ে আলোচনায় মেতে ছিলেন।

মাগরিবের নামাজের পর অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল ইসলাম এমপি, সাংসদ ফজলে করীম চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান মিতা, ড. আবু রেজা নদভী, মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, মোজাফফর হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহবায়ক আলী আব্বাস, নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ সালাম, চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মোশতাক আহমেদ, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেনসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।

জানাজায় ইমামতি করেন আল্লামা তাহের শাহ বড় সন্তান আল্লামা কাশেম শাহ। জানাজায় জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের দুইটি ফ্লোর ছিল জনাকীর্ণ।

জানাজা শেষে জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয় বাদলের কফিন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানান পুলিশের একদল চৌকশ সদস্য। এর পূর্বে মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ মঈন উদ্দিন খান বাদলের স্মৃতিচারণ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

জানাজায় আগত বাদলের মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম সহযাত্রী ডা. মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বাদল। বাদল যেমন ছিল সাহসী, তেমনি ছিল কৌশলী। স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠনেও বাদল সক্রিয় ছিল। এজন্য জাসদে যোগ দিয়েছিল সে। তাকে হারিয়ে জাতি একজন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের নেতাকে হারালো।’

Farewell-love-goodbye-Badal-2

জানাজা শেষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা, চট্টগ্রাম নগর কমান্ড, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নগর পুলিশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, জাসদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক বিএনপি নেতা মঞ্জুর মোরশেদ খানের পক্ষে তাঁর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

মঈন উদ্দিন খান বাদলের প্রথম জানাজা জাতীয় সংসদের ট্যানেলে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ বাদলের প্রতি সম্মান জানান।

উল্লেখ্য, গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন এই বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ। ১৮ অক্টোবর তিনি চিকিৎসার জন্য ভারত যান।

এফএম/সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!