করোনাকালে তীব্র চিকিৎসা সংকটের মাঝে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কিছু আইসোলেশন সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে ওঠে চট্টগ্রামে। চিকিৎসা পাওয়া যেখানে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছিল, সেখানে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে এসব অস্থায়ী হাসপাতাল। মানবিক এসব প্রতিষ্ঠানের পাশে সে সময় আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার হাজার হাজার মানুষ। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা বিকাশে এবং নগদে লাখ লাখ টাকার সহযোগিতা দিয়েছে মানুষ।
বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসায় এসব হাসপাতালের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হলেও এসব হাসপাতালের আর্থিক হিসাবনিকাশ প্রকাশের দাবি জানাচ্ছেন অনেকে। সাধারণ মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পরিমাণ অর্থ সহযোগিতা দিয়েছেন, সেই অর্থ কিভাবে কোন্ খাতে কত খরচ হয়েছে— তার হিসাব জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহবান জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, এতে স্বচ্ছতা দেখলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো দুর্যোগেও মানুষ উদারহস্তে এগিয়ে আসবে। উদ্যোক্তাদের ভাবমূর্তিও তাতে বাড়বে।
গত কয়েকদিন ধরেই এই বিষয়টি নানাভাবে আলোচনা হচ্ছে প্রায় সব মহলেই। কঠিন দুর্যোগের সময় চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাড়ানো এসব প্রতিষ্ঠানের সংগঠকরা এই আলোচনাকে কিভাবে দেখছেন কিংবা এসব প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসেব তারা আদৌ দেবেন কিনা এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তাদের সাথে।
চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোগী কমে আসায় আমরা আপাতত আমাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছি। আমাদের আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রস্তুত করা হচ্ছে। এটা খুব সহজ নয়। কিছুটা সময় লাগলেও পূর্ণাঙ্গ হিসাব আমরা প্রকাশ করবো। আশা করছি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আমরা তা পারবো।’
অন্যদিকে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিদায়ী অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম করোনা আইসোলেশন সেন্টারের অন্যতম উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে করোনা আইসোলেশন সেন্টারটি সেবা চালু রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সকল উদ্যোক্তাদের সর্বসম্মতিক্রমে আপাতত এই করোনা আইসোলেশান সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে আমরা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অনুদান ও খরচের হিসাব গণমাধ্যমের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীর সামনে তুলে ধরবো।’
ওই আইসোলেশন সেন্টারের সমন্বয়ক নুরুল আজিম রনিও বললেন, ‘যেহেতু মানুষ আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সেহেতু আয়-ব্যয়ের সুষ্ঠু হিসাব প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের কাজ স্থগিত করার পর সেই হিসাব সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরবো।’
এর আগে করোনাকালে চট্টগ্রামে ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারসমূহের অবদানের কথা স্বীকার করে এসব প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছিলেন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। এ আহ্ববানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে আরও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন।
এডভোকেট আখতার কবির বলেন, মহামারিতে নিজের জীবন বিপন্ন করে যারা মানুষের সেবা করতে এগিয়ে এসেছেন এই জনপদের মানুষ হিসেবে আমরা তাদের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই মহামারিই শেষ মহামারি নয়। যদিও এখনও করোনা নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। তবে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এ সকল ফিল্ড হাসপাতাল ও কয়েকটি আইসোলেশন সেন্টারকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
টিআইবি চট্টগ্রাম মহানগরের এই সভাপতি বলেন, তথ্যনির্ভর সূত্রে জেনেছি শুধু একটি ফিল্ড হাসপাতালকে ৯ সহস্রাধিক ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান সাধ্যানুযায়ী অর্থ সহায়তা প্রদান করেছেন। যারা মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তাঁদের নাম এবং প্রদত্ত অর্থের পরিমাণের তালিকাটি যদি স্বচ্ছতার সাথে প্রকাশ করা হয়, তাহলে মহান কাজে অবদানকারীদের বিষয়ে কোন দুর্জনও আঙ্গুল তুলতে পারবে না।
তিনি বলেন, অন্যথায় ভবিষ্যতে আরও কোন বড় দুর্যোগ কিংবা আরো ভয়াবহ চেহারায় ধ্বংসযজ্ঞ চালালে তখন এ ধরনের সহযোগিতা পাওয়া দুরূহ হতে পারে।
এআরটি/সিপি