ফল কবে, ভর্তি কবে— চবিতে ভর্তিচ্ছুরা অশেষ অপেক্ষায়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বি-১ ও ডি-১ উপ-ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। গত রোববার (২৭ অক্টোবর)থেকে ‘বি- ইউনিটের’ পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। তবে পরীক্ষা শেষ হলেও ‘ডি ইউনিটে ’ একটি পরীক্ষার ফল স্থগিত করার কারণে আংশিক শিক্ষার্থীদের আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের আশঙ্কা করছেন। এই ইউনিটে সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকে আর সে ইউনিটেই হয়েছে সব অসঙ্গতি।

২৮ অক্টোবর দুই শিফটে অনুষ্ঠিত হয় ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এতে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচতলার ১০১, ১০২ ও ১০৩ নম্বর কক্ষ নির্ধারিত ছিল ন্যাশনাল ও ব্রিটিশ কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়,পরীক্ষায় ন্যাশনাল কারিকুলামের ইংরেজি মাধ্যমের ৪১৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। প্রথম শিফটে পরীক্ষা শুরু হলে তাদের (ন্যাশনাল কারিকুলাম) জন্য আলাদা প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়নি। ওই শিক্ষার্থীদের বাংলা অংশের প্রশ্নের উত্তর দেয়া আবশ্যিক হলেও, তাদের ব্রিটিশ কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো প্রশ্ন দেওয়া হয়। যাতে বাংলা অংশটি ছিল না। এমন প্রশ্ন পেয়ে তিনটি কক্ষের শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানালে, কক্ষগুলোতে দায়িত্বরত শিক্ষকরা ব্রিটিশ কারিকুলামের প্রশ্নের ‘ স্পেশাল ইংলিশ’ অংশটি উত্তর করতে নির্দেশনা দেন । পরে শিক্ষার্থীরা সে নির্দেশনাই অনুসরণ করে।

দ্বিতীয় শিফটের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। যা ছিল পরীক্ষার নিয়ম বহির্ভূত। শুধু তাই নয়, বিকেলের শিফটে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ক্যাটাগরির প্রশ্নে সাধারণ জ্ঞানের অংশে একটি প্রশ্নের ছিল না সঠিক উত্তর।

‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাজুড়েও ছিল এমনই অসঙ্গতির চিত্র। তবে এরই মধ্যে ইউনিটটির ফল প্রকাশ স্থগিত করা হয়েছে। ৬ নভেম্বর পুণঃপরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের পরীক্ষায় উপস্থিত ন্যাশনাল কারিকুলামের ৪১৬ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এতে করে যে ফলাফল তৈরি করা হবে, তাতে বৈষম্যের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় এমন অসঙ্গতি ও অসামঞ্জস্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ৪৪ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিলেও পুণঃপরীক্ষায় কেবল ইংরেজি মাধ্যমের ৪১৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি পক্ষ লাভবান এবং আরেকটি পক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েই যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু অংশের পরীক্ষা নিলে তা আইনসম্মত হবে না। দুই শিফটে দুই ধরনের প্রশ্ন। ফের পরীক্ষা হলে আরেক ধরনের প্রশ্ন। এক্ষেত্রে প্রশ্নের মানও এক হবে না। শিক্ষার্থীদের কোনো পক্ষের ভুল না হলেও, একটি পক্ষ লাভবান হবে। এতে প্রশাসনের ভুলে বৈষম্যের শিকার হবেন সব শিক্ষার্থী। আর যেহেতু ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অনেকগুলো অসঙ্গতি প্রতীয়মান, সেহেতু এটি নিয়ে শিক্ষার্থীরা চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা মাধ্যমে পরীক্ষা দেয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলেই প্রশাসন পুণঃপরীক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু এতে করে তাদের আবার পরীক্ষার সুযোগ দেয়ায় অন্যরা বৈষম্যের শিকার হবে। প্রশাসন চাইলে বাংলা মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করে উত্তীর্ণদের সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের একসাথে পরীক্ষা নিতে পারে। যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতো।

ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া শাকিল নামের এক শিক্ষার্থী বলেন,আমি ঢাবি আর চবি ভর্তি পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছি। ঢাবিতে আমি অকৃতকার্য হয়েছি। আর চবির বি ইউনিটে মেরিট লিস্টে এসেছি। তবে ‘ডি ইউনিটে’ কয়েকটি নতুন সাবজেক্ট আসছে এগুলোতে ভর্তি হওয়ার খুব ইচ্ছা আছে। পরীক্ষা শেষ হয়েও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবনা। পরীক্ষা শেষ হয়েও যেন শেষ হয়নি বলে জানায় সে।

২৮ অক্টোবর ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন নিয়ে জটিলতার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এবং ইউনিট কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক।

পরীক্ষার পরদিন ২৯ অক্টোবর বিকেলে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের এক শিক্ষক ও কয়েকজন অভিভাবক উপাচার্যকে ফোনে মৌখিকভাবে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন। পরে সন্ধ্যায় ইউনিট সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন উপাচার্য। সেখানে এটি নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ দেখা দেয়। সেখানে উপস্থিত থাকা দুই জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের বরাতে জানা যায়, সভায় তিন শিক্ষক ওই পরীক্ষায় অংশ নেয়া ন্যাশনাল কারিকুলামের সব শিক্ষার্থীকে বাংলা অংশের জন্য ৩০ নম্বর দিয়ে দিতে প্রস্তাব দেন। কিন্তু অন্যান্য শিক্ষকদের আপত্তির মুখে সর্বসম্মতিক্রমে ৪১৬ শিক্ষার্থীর পুণঃপরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমাকে কয়েকজন অভিভাবক বিষয়টি জানায়। পরে পরীক্ষা কমিটির সাথে বৈঠক করে ইংরেজি মাধ্যমের পরীক্ষা পুণরায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে তাই এ সিদ্ধান্ত।

নিজেদের ভুল স্বীকার করে ‘ডি’ ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড.আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, আমরা এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। জাহাঙ্গীরনগরে আট শিফটে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। ফলে আমরাও প্রশ্নের মান ঠিক রাখব। এই পুণঃপরীক্ষাকে তৃতীয় শিফট হিসেবে গণ্য করা হবে। এখানে কোনো বৈষম্য হবে না।

এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ইউনিট ও দুইটি উপ-ইউনিটে চার হাজার ৯২৬টি আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৭০ জন অনলাইনে আবেদন করেছেন । এই পর্যন্ত ‘এ’‘বি’ আর ‘সি’ ইউনিটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বি১ ও ডি১ উপ-ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়েছে ভর্তি পরীক্ষা।

এইচটি/এসবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!