ফণী আতঙ্কেও কক্সবাজারে হোটেল ছাড়ছেন না পর্যটকরা

উপকূল জুড়ে আতংক ছড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল হলেও পর্যটকদের ওপর রেশ পড়েনি ফণীর। গত দুদিন ধরে যেসব পর্যটক কক্সবাজার এসেছিলেন তারা কেউ হোটেল ছেড়ে চলে যাননি। কোন বুকিং বাতিল হয়নি এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যসোসিয়েশন’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) রিয়াদ ইফতেখার।

তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে জোয়ারের পানি উপকূলে কিছুটা আতংক ছড়ালেও বৈশাখের দাবদাহ থাকায় বালিয়াড়িতে এর রেশ পড়েনি। তাই মে দিবসের ছুটিকে উপলক্ষ করে শনিবার পর্যন্ত টানা বুকিংয়ে আসা পর্যটকদের কেউ কক্সবাজার ছাড়েননি।

রিয়াদ ইফতেখার আরো জানান, শুধু তাই নয়, গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপ প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে মে দিবস থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সময়ের জন্য কক্সবাজার অবস্থান করছে। হোয়াইট অর্কিডসহ হোটেল-মোটেল জোনের বেশ কয়েকটি হোটেল তাদের বুকিংয়ে রয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) বিকেল থেকে তাদের চেক আউট শুরু হয়ে শনিবারে শেষ হবে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কেউ যদি পর্যটকরা কক্সবাজার ছেড়েছে প্রচার করে তবে তা না জেনেই বলেছে। এটি কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে অনিরাপদ প্রমাণের অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা বলা যাবে।

সি-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজি বলেন, এখন পর্যটন মৌসুম বলতে কোন কথা নেই। পুরো বছরই কমবেশী পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করে। প্রকৃতিতে বৈশাখের দাবদাহ চলছে। তাই এমনিতে অন্য সময়ের চেয়ে পর্যটকের উপস্থিতি কম। এরপরও এ সপ্তাহের শুরুতে যে পরিমাণ পর্যটক এসেছেন তা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাব তাদের উপর পড়েনি। তবে ৬ মে থেকে রোজার সেহেরি খাওয়া শুরু হলে শনিবার থেকে পর্যটক একেবারে কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এর সাথে ঘূর্ণিঝড়ের কোন প্রভাব টানা অবান্তর । বিশ্বের আধুনিক পর্যটন শহর গুলোর মতোই কক্সবাজারও এখন নিরাপদ পর্যটন নগরী হিসেবে গণ্য।

ওশান প্যারাডাইস হোটেল এন্ড রিসোর্টের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, প্রকারভেদে ভ্রমণকারীরা ভিন্ন হন। অনেকে শীত মৌসুমে বেড়াতে এলেও কেউ কেউ বৈশাখেও আসেন। রমজানে বেড়ানো পর্যটকের সংখ্যাও কম নয়। আমরা সব পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকি। গত কয়েকদিন ধরে থাকা পর্যটকদের মাঝে চলমান ঘূর্ণিঝড়ের কোন প্রভাব বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইনি।

ঢাকায় কর্মরত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী এলাকার বাসিন্দা রাসেল মাহমুদ পরিবার-পরিজন নিয়ে উঠেছেন সী-গাল হোটেলে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কথা শুনছি। এটা ভারতে আক্রমণ করলেও বাংলাদেশে তেমন একটা ক্ষতি করবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া কক্সবাজারে যে পরিমাণ রোদ ও তপ্ত আবহাওয়া এতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আতংকিত হবার মতো কিছু দেখিনি। কক্সবাজার নিয়ে আতংকিত সব প্রচারণা বাড়তি কৌতুহল বলে মনে হচ্ছে।
কক্সবাজারের ঝাউতলা এলাকার রান্নাঘর রেস্তোরাঁর মালিক মুহাম্মদ সালাম বলেন, ‘মে দিবসের আগে থেকে পর্যটকরা যেভাবে খেতে এসেছেন বৃহস্পতিবার রাতেও তেমনটি জট ছিল। ঝাউবন ও পৌষি রেস্তোরাঁতেও একই চাপ চোখে পড়েছে।’

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যসোসিয়েশন সদস্য ও দিগন্ত ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, পর্যটন জোন হিসেবে কক্সবাজার অবকাঠামোসহ এখন সবদিক দিয়েই এখন নিরাপদ। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হতে বাঁচতে মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে যান। কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের ভবনগুলো সাইক্লোন শেল্টার হতে কোন অংশে কম নয়। তাই পর্যটকরা সৈকত এলাকাকে অনিরাপদ মনে করছেন না হয়ত।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এখন গরম তাই পর্যটক মৌসুমের চেয়ে কম। কিছু পর্যটক হোটেল-মোটেল জোনে রয়েছে । ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে এবং পরিত্রাণ পেতে সচেতনতা সৃষ্টিতে আমরা বালিয়াড়িতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মাইকিং করেছি। যেসব পর্যটক উত্তাল সাগরে নেমেছে তাদের তুলে এনেছি। আমারা সৈকত এলাকার নিরাপত্তায় সর্বক্ষণ সতর্ক রয়েছি।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘর্ণিঝড় ‘ফণী’ কারণে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭নম্বর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬নম্বর বিপদ সংকেত ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি রাতেও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে বলে আবহাওয়া বুলেটিনে জানানো হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!