ফণীর বিপদ কেটেছে, চার বন্দরেই সংকেত নেমেছে ৩ নম্বরে

চট্টগ্রাম বন্দরে সন্ধ্যায় পণ্য উঠানামা শুরু হতে পারে

ভারতের ওড়িশা থেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়ে এসে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব চালানোর পর শক্তি খুইয়ে বাংলাদেশে সাইক্লোনিক স্টর্ম বা ঘূর্ণিঝড় হয়ে প্রবেশ করেছে আজ শনিবার (৪ মে) ফণী। দ্রুত শক্তি খুইয়ে পশ্চিমবঙ্গেই ফণী শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থেকে শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে যায়। এরপর দ্রুত আরও শক্তি খোয়াতে শুরু করে। ফণীর গতিবিধির উপর নজর রাখা আবহাওয়াবিদরা আগেই জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে শনিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এই ঘূর্ণিঝড়। বাস্তবে হয়েছেও তাই। ফলে যে প্রবল আশঙ্কায় প্রহর গুণছিলেন বাংলাদেশের মানুষ, কিছু দুর্ঘটনা ছাড়া বাস্তবে সেরকম কিছু ঘটেনি এখন পর্যন্ত। গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশে ঝড় হবে না। তবে ভারী বৃষ্টি হবে।

দুর্বল হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণী আজ শনিবার (৪ মে) দুপুরের দিকে টাঙ্গাইল, পাবনা ও ময়মনসিংহে অবস্থান করছিল। এর আগে সকাল নয়টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি ফরিদপুর-ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছিল। বেলা দেড়টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি এখন নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি ঝরিয়ে এটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে।

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাব থেকে এখন অনেকটা মুক্ত চট্টগ্রাম বন্দর। বিপদসীমার আওতার বাইরে এখন বন্দর। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেতের পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঝড়ের আগে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে যারা উঠেছিলেন, শনিবার বিকাল থেকে তারা ঘরে ফিরতে পারবেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ঢাকার আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেহেতু বিপদ সংকেত নামিয়ে আনা হয়েছে, সেহেতু চট্টগ্রাম বন্দর এখন বিপদসীমার বাইরে আছে বলা যায়।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক দুপুর পৌনে তিনটার দিকে বলেন, ‘বন্দরের সার্বিক অবস্থা ভালো। আবহাওয়া বিবেচনা করে সন্ধ্যার দিকে বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করা জাহাজগুলো জেটিতে নিয়ে আসা হবে। এরপর পণ্য উঠানামা শুরু হতে পারে।’

আবহাওয়ার অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ধীরে ধীরে এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে।’

বুলেটিনে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ফরিদপুর-ঢাকা অঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ফণী আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে গভীর নিম্ন চাপ আকারে শনিবার (৪ মে) দুপুর ১২টায় পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ অঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দেশের অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।

অমাবস্যা ও বাতাসের চাপের পার্থক্যের আধিকে ̈র কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ২-৪ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!