ফণীর পর ঈদের লম্বা ছুটি/ লাটে উঠছে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য

ঈদ ও বাজেটকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তবে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব কাটতে না কাটতেই এবার ঈদের ছুটির প্রভাব পড়ছে বন্দরে। এমনিতেই চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অবস্থানকালীন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এ অবস্থায় ঈদের বন্ধে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধের পর জাহাজ ও কনটেইনার জটের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আর এই শঙ্কা সত্যি হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন ব্যবসায়ীরা। যার মাশুল দিতে হবে ভোক্তাদের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় থাকলে তেমন কোন সমস্যা হবে না।

স্থবিরতার আশঙ্কা যে কারণে
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে ঈদ এবং বাজেটের আগে ব্যাপক হারে পণ্য আমদানি করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং ঈদ-বাজেট কাছাকাছি সময় হওয়ায় আমদানি হয়েছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি। কিন্তু রমজানের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে সাগর উত্তাল থাকায় পুরো তিনদিন বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম। আর তার প্রভাবে এক মাস পরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলোকে তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ফণীর প্রভাব না কাটতেই শুরু হচ্ছে ঈদের লম্বা ছুটি। এ অবস্থায় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত ৩১ মে শুক্রবার ও ১ জুন শনিবার ছিল সরকারি ছুটি। গতকাল ২ জুন রোববার শবে কদরের বন্ধ। আজ ৩ জুন সোমবার খোলা থাকলেও আগামী ৪ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত ঈদের টানা বন্ধ। অথচ বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুধুমাত্র ঈদের দিন ৮ ঘন্টা বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু বন্দরব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো এ সময় ছুটিতে থাকলে বন্দর চালু রাখার কোন সুফল মিলবে না বলে আশঙ্কা বন্দর ব্যবহারকারীদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আট দিনে যদি কনটেইনার ওঠানামা ও খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকে, তাহলে তা শেষ করতে বন্দরের লেগে যেতে পারে পুরো এক মাস সময়। আট থেকে নয় দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে যে সব কনটেইনার নামবে সেটি সামাল দিতে বন্দরের খুব কঠিন অবস্থা ধারণ করবে। তাছাড়া এ সময়টাতে কোন পণ্য ডেলিভারী হবে না।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরের সাথে ট্রাক, ট্রেইলার, ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠান কাজ করলে বন্দরে কাজ চলবে। অন্যথায় কাজ করা সম্ভব হবে না।

টানা তিনদিন বন্ধে বন্দর সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোয়িশেনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী হাওলাদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেলিভারি কিছুটা হচ্ছে। রোববার আনুমানিক ৩ হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। তবে বন্ধের দিনে শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ডেলিভারি কার্যক্রম সম্পূর্ণ হচ্ছে না।’

ঈদের বন্ধে কেমন সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক সমস্যা হবে। নতুন জাহাজ আসছে। ঈদের আগে-পরে তিনদিন সবগুলো হাইওয়ে বন্ধ। এতে জাহাজজট হবে।’

গত দিন নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সারোয়ার বলেন, ‘এটা পুরাতন কথা। একই ক্যাসেট বারবার বাজানো। ঈদের বন্ধের সময় খোলা রাখতে বলে। ডিও দিতে বলে। কিন্তু বন্ধের দিন কেউ ডিও নিতে আসে না। যাদের ডিও প্রয়োজন তারা আগেই নিয়ে নেন।’

ঈদের বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন ছাড়া প্রতিদিন ডিও ইস্যু করা হবে।’

ঈদের বন্ধে যদি বন্দরে জাহাজজট লাগে, ডিপো থেকে কনটেইনার ভেতরে ঢুকতে পারে না, বাইরের কনটেইনার ডিপোতে যেতে পারে না। এই সমস্যাটা আলটিমেটলি আমদানিতে প্রভাব ফেলে। আমদানি বিলম্ব হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, পরিবহন সংস্থাসহ বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ঈদের বন্ধে অফিস খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তবু আশা দেখছে বন্দর কর্তৃপক্ষ
বন্দরের পরিবহন পরিচালক এনামুল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চেম্বার, বিজিএমইএসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কার্যক্রম সচল রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। তাদেরকে বলেছি, ‘বন্ধের দিনে আপনারা প্রতিষ্ঠানের গুদাম খোলা রাখেন। কাজ করেন।’ আশা করি, এ বছর ঈদের বন্ধের সময় বন্দরে তেমন কোন সমস্যা হবে না।’

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেরও প্রায় ৯০-৯২ শতাংশ হয়ে থাকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আটটি এবং বহিঃনোঙ্গরে ১৬টি পণ্যবাহী জাহাজ রয়েছে। বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার রয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার টিইইউএস। বন্দর জেটিতে একটি জাহাজ তিন দিন অবস্থান করতে পারে। তারপর থেকে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার ডলার ভাড়া বা জরিমানা গুণতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে কাস্টম, সিঅ্যান্ডএফ, শিপিং এজেন্ট, বাপা, চেম্বার, বন্দর ব্যবহারকারীসহ প্রায় ১৪-১৫টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা জড়িত। তাদের ওপর বন্দরের কর্মসূচি নির্ভর করে। চট্টগ্রাম বন্দর ঈদের দিন শুধুমাত্র আট ঘন্টা ছাড়া সারা বছর চালু রাখতে হয়। কিন্তু সবগুলো সংস্থা যদি চালু না রাখে তাহলে বন্দরের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।

এএইচ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!