প্রার্থীর পিছু পিছু/ ভয়ভীতি আতঙ্ক কাটিয়ে ঘরে ঘরে আবু সুফিয়ান

হতাশা ভোটারের— ‘ভোট দিতে গেইলে হয় দে জো গই’

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনের গণসংযোগ করতে বোয়ালখালীর আহলা করলডেঙ্গা যাচ্ছিলেন বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান। মিলিটারির পুল পেরোতেই তার গাড়িবহরের সামনে পড়ে নৌকা সমর্থকদের একটি মিছিল। মিছিলের পিছু পিছু ধীরগতিতে এগোচ্ছিল সুফিয়ানের গাড়িবহর। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে হঠাৎ করেই এক ধরনের আতংক ভর করে। মিছিলটি কি তাদের যাওয়ার রাস্তা করে দেবে, নাকি কোন ঝামেলা হবে? কিন্তু না, আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে পেছনে আবু সুফিয়ানের গাড়িবহরের বিষয়টি নজরে আসতেই মিছিলের লোকজন দুই ভাগ হয়ে বিএনপির গাড়িবহরকে পথ করে দিল। শুধু তাই নয়, পাশ থেকে হাসি মুখে আবু সুফিয়ানের সাথে শুভেচ্ছাও বিনিময় করলেন তারা। কেউ কেউ হ্যান্ডশেকও করলেন। ক্ষণিকের জন্য অবসান হল বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্বেগ আতংক। মিলিটারির পুলে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও উদ্বেগ-আতংক থেকে যেন কিছুতেই বের হতে পারছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এর কারণও আছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে এখন পর্যন্ত দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বেশ উচ্ছ্বাস উদ্দীপনার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ সম্পন্ন হলেও নির্বাচনের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা সুখকর নয় দলটির। এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার কথা মেনে নিলেও শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা থাকে কিনা তা নিয়েই শঙ্কিত তারা। পাশাপাশি গত দুদিনে আওয়ামী লীগ মারমুখী আচরণ শুরু করেছে বলেও দাবি তাদের।

আবু সুফিয়ানের প্রচারণার সময়ে অনেক বাড়ি থেকে নারী ভোটারদের দল বেধে বের হয়ে আসতে দেখা গেছে।
আবু সুফিয়ানের প্রচারণার সময়ে অনেক বাড়ি থেকে নারী ভোটারদের দল বেধে বের হয়ে আসতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উঠে আসছে ভোটারদের মাঝ থেকেও। নির্বাচনী প্রচারণার সময় করলডেঙ্গার সত্তরোর্ধ এক ভোটার তো আবু সুফিয়ানকে বলেই বসলেন, ‘আঁরাত্তুন ভোট চাই লাভ অইবু না ও বাপ? আঁরা কি ভোট দিত্তারি না? ইতারা তো নিজারা নিজারা ভোট দি ফালাই। ১০টা-১১টায় ভোট দিতে গেইলে হয় দে জো গই, ভোট শেষ। পাকিস্তান আমলত অ নিজর ভোট নিজে দিইয়্যি। ইয়া তো আর ন’ পারি।’ (আমাদের কাছে ভোট চেয়ে লাভ আছে না বাবা? আমরা কি ভোট দিতে পারি? তারাই তো নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়ে দেয়। সকাল ১০টা ১১টা বাজে ভোট দিতে গেলে বলে— চলে যান ভোট শেষ। সেই পাকিস্তান আমল থেকে ভোট দিই। পাকিস্তান আমলেও নিজেদের ভোট নিজেরা দিয়েছি। এখন পারি না।)

তবে ভোটারদের অভয় দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। করলডেঙ্গার পথসভায় আব্দুল হালিম নামে এক বক্তা বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে ভোট শতভাগ সুষ্ঠু হবে। আজকেও শাকপুরায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অন্যায়ভাবে তোলা নৌকা নামিয়ে ফেলেছে পুলিশ। আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন। আপনাদের অধিকার আদায়ে আমরা সবটুকু করবো।’

এসব ভয়ভীতি আতংক পাশ কাটিয়ে সবখানেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন আবু সুফিয়ান। সাড়াও পেয়েছেন বেশ। আবু সুফিয়ানের প্রচারণার সময়ে অনেক বাড়ি থেকে নারী ভোটারদের দল বেধে বের হয়ে আসতে দেখা গেছে। রাস্তার পাশের জমিনে দল বেধে দাড়ানো এসব ভোটারদের সাথে গাড়িবহর থামিয়ে কুশল বিনিময়ও করেছেন তিনি। অনুরোধ করেছেন যেকোন মূল্যে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার।

ভোটারদের অভয় দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা।
ভোটারদের অভয় দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা।

এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল হালিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা আছে। তবে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এখনকার পরিবেশ বজায় থাকলে ধানের শীষের ভূমিধস বিজয় হবে। তবে নির্বাচনী কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে পারে আওয়ামী লীগ। সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি।’

তবে প্রশাসনকে এখনও আস্থায় নিতে পারছেন না বিএনপির কেউ কেউ। যেমনটি বলছিলেন আবেদ নামে একজন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের ভূমিকা বোঝা যাবে ভোটের আগের রাত আর ভোটের দিনের ভূমিকায়। তার আগে কিছু বলে লাভ নেই। গত কয়েকটা নির্বাচনে প্রশাসনের যে ভূমিকা, তা থেকে তারা বের হতে পারবে বলে তো মনে হয় না।’

বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মেহেদী হাসান সুজন বলেন, ‘আবু সুফিয়ান ভাই খুব দ্রুত নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন। বোয়ালখালীতে গণজাগরণ হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন তারা মামলা হামলার আশ্র‍য় নিচ্ছে। গত দুদিন আগে গোমদণ্ডীতে দা-ছুরি নিয়ে তারা সুফিয়ান ভাইয়ের ওপর হামলা করেছে। গতকাল নিজেরা নিজেদের অফিসে আগুন দিয়ে ককটেল ফাটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।’

নির্বাচনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চান্দগাঁওয়ের দিকে কিছুটা ভাল হলেও বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগ আতংক ছড়াচ্ছে। বোয়ালখালীতে আমার কোন পোস্টারই তুলতে দেওয়া হয়নি। নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তবে এসব করে পার পাওয়া যাবে না। নির্বাচনে যেকোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমি প্রস্তুত।’

জাসদের সাংসদ মাইনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপনির্বাচনে মোকাবেলা করছেন ৬ প্রার্থী। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ এবং বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান। উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার অভিযান শেষ হলেও শেষ পর্যন্ত কী হচ্ছে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও দুই দিন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!