আড্ডা গান স্মৃতিচারণে চবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আড্ডা, গান, স্মৃতিচারণে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টার হয়ে উঠেছে যেন এক টুকরো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত চবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে পুরো সময় জুড়ে দেখা গেছে বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। বয়স, পেশাগত গাম্ভীর্য কিংবা ব্যবসায়িক ব্যস্ততা সব ছুড়ে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের নিয়ে কৈশোরের সেই সোনালী দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার একটা প্রাণন্তকর প্রচেষ্টাই দেখা গেছে তাদের মধ্যে।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের শেষ দিনের চিত্র এটি।

এদিন সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ওড়ানোর মধ্যদিয়ে পুনর্মিলনীর শেষ দিনের আনুষ্ঠানিকতার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ৪ উপাচার্যকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, অধ্যাপক বদিউল আলম, অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

আড্ডা গান স্মৃতিচারণে চবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী 1

এ সময় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘জ্ঞান সৃজন, উৎপাদন ও গবেষণার মাধ্যমে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সেজন্য অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে সকলে সহযোগিতা ও দোয়া করবেন। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতির মাধ্যমে আমরা যেন পৃথিবীর মানচিত্রে নাম লেখাতে পারি।’

এরপর শুরু হয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ। স্মৃতিচারণ পর্বে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতি নিজ হাতে অপরূপ রূপে সাজিয়েছে। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি গিয়েছি, প্রাকৃতিক শোভার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।’

ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অ্যালামনাইয়ের এ মিলনমেলার মতো মিলনমেলা করারা পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে অনেক সময় কাটিয়েছি, সেটি আবার মনে পড়েছে।এখানে আজ অনেক পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হলো। যাদের সাথে ছাত্রজীবনে ট্রেনে চড়ে গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে ক্যাম্পাসে যেতাম। এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় আবার যদি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফিরে যেতে পারতাম। গলা ছেড়ে গান গাইতে পারতাম।’

আড্ডা গান স্মৃতিচারণে চবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী 2

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলমের সঞ্চালনায় ও সভাপতি আবদুল করিমের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক তথ্যসচিব মোসলেম চৌধুরী, সাবেক মূখ্য সচিব আব্দুল করিম, সাবেক সচিব আব্দুস শহীদ, বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কোজ, আওয়ামী লীগের দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, চাকসুর সর্বশেষ ভিপি নাজিম উদ্দীন ও সাবেক সদস্য মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী প্রমুখ।

পরে মধ্যাহ্নভোজ ও নামাজের বিরতি শেষে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীর সম্মিলিত নৃত্য দিয়ে বিকাল পৌনে ৩টায় শুরু হয় সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নানান পরিবেশনা, রেনেসা ব্যান্ডের সদস্য নকিব খানের সঙ্গীত পরিবেশনা, হানিফ বাউলের বাউল গান, ও চিরকুটের কনসার্টের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপনী হয়।

অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সুমাইয়া শারমিন বলেন, অসাধারণ দুটো দিন কাটালাম। ৫৩ বছরে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই পুনর্মিলনী প্রবীণ নবীনদের যে সম্মিলন তৈরি করেছে সেটা সত্যিই আমাকে অনাবিল আনন্দ দিয়েছে। আশা করছি ছোট পরিসরে হলেও যেন প্রতি বছর এমন আয়োজন করা হয়।

এর আগে ‘প্রাণের উৎসবে মাতি উল্লাসে’ স্লোগানে বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনদের এই মিলনমেলা।

এআরটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!