প্রভাবশালীর মামলা ও হুমকিতে জীবনের নিরাপত্তা চান সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার

এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে অপহরণের শিকার সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার বিচার পাওয়ার বদলে উল্টো মানহানি মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়। মামলা ও হুমকির কারণে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত এই সাংবাদিক নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে দোষীদের বিচার ও নিজের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।

সোমবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন নির্যাতিত সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার তার অসহায়ত্বের বিবরণ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাতে আমার গ্রামের বাড়ি চন্দনাইশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে চট্টেশ্বরী রোড থেকে ভাড়া মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ার সামনে রাস্তার ওপরেই অপহরণের শিকার হই। পরে ১ নভেম্বর সীতাকুন্ড থানাধীন কুমিরা এলাকা থেকে আমাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জনতা। আমি সুস্থ হয়ে অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা করি।’

তিনি বলেন, ‘মামলার পর নানা ধরনের হুমকি ও গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টাসহ নানাভাবে আমাকে হয়রানি করেন প্রভাবশালীরা। আপনারা শুনে অবাক হবেন, আমাকে অন্যায়ভাবে অপহরণ করে নির্মম নির্যাতনের পর সংবাদ প্রকাশ করায় কারণে দেওয়া হয় মিথ্যা মামলা। আমার বিরুদ্ধে দুটি মানহানি মামলা দায়ের করেছেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য ভূমিমন্ত্রীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অপরদিকে আনিসুজ্জামান চৌধুরীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ‘সিটি নিউজে’ সংবাদ প্রকাশ সংক্রান্ত কারণে আমাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন।’

নির্যাতিত সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘সত্য প্রকাশের অপরাধে আজ আমি নিয়মিত আসামি হিসেবে কোর্টের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। অপহরণ ও নির্যাতনের বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, নিজেই হয়ে গেলাম মামলার আসামি। আমি এবং আমার স্ত্রী-সন্তান আজ খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি। কোনো অপরাধ না করেও নিজের জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি বাঁচতে চাই। সুন্দর একটি জীবন চাই।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে আমাকে বার বার হত্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে টার দিকে পাঁচলাইশ থানা এলাকার বদনাশাহ মাজারের সামনে চট্টমেট্টো -থ-১২-৫২৯৪ একটি সিএনজি অটোরিকশা চাপায় আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় আমার দায়ের করা অজ্ঞাত অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এ ঘটনার বিষয়ে অবহিত করলে তিনি তেমন দায়িত্বশীল আচরণ করেননি আমার সাথে। বরং উল্টো সেদিন আমাকে অপহরণ মামলার তদন্ত বিষয়ে তার সাথে জরুরিভিত্তিতে দেখা করতে বলেন। জেএমসেন হলের পাশে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে সেদিন গেলে তদন্ত কর্মকর্তার আচরণে আমি বিস্মিত এবং তার কথাগুলো শুনে আমি চরম আতঙ্কে রয়েছি এখনও। তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে বলেন, রনির মতো মানুষ যদি কাউকে নেয়, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে তারা আর কেউ ফিরে আসে না— অঙ্ক মিলতেছে না পুলিশের। একথাও সেই পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে শুনিয়েছেন।’

গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘গত ১৮ মার্চ বিকেল সাড়ে পাচঁটায় নগরের জামালখান সিনিয়র্স ক্লাবের সামনে একটি কালো প্রাইভেট গাড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিলে আমি গুরুতর আহত হই। এই ঘটনায় রিকশাচালকও আহত হন। এছাড়া বাগমনিরাম ওয়ার্ডের ব্যাটারি গলির আমার ভাড়া বাসাটিও আমাকে ছাড়তে হয়েছে চাপের মুখে। ৩৭ বছর শহরেই বসবাস করা আমাকে এখন বাধ্য হয়ে গ্রামে বসবাস করতে হচ্ছে। পরিবার নিয়ে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার পরিবারকে বাঁচাতে চাই সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা।’

সিএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!