প্রবেশের অপেক্ষায় ‘বুলবুল’, চট্টগ্রামে বিপদ সঙ্কেত ৯

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ক্রমান্বয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আইলার মতো শক্তিশালী রুপ নিয়ে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডব শুরু হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে বুলবুল সুন্দরবন দিয়ে উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুরকে ৯ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় রাখা হয়েছে।

এর প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং কক্সবাজারকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শনিবার মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে। কক্সবাজার থেকে ৪৮০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে ঝোড়ো হাওয়ার আকারে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

‘বুলবুল’-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এ ছাড়া এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে—উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোকে ১০ নম্বর মহা বিপদ সঙ্কেতের আওতায় রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর থাকবে ৯ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে— ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারিবর্ষণসহ ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭-৯ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. শহীদুল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে বুলবুল সুন্দরবন দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১০ বছর আগে পশ্চিম বঙ্গের সাগরদ্বীপ ও সুন্দরবন এলাকায় আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা। সেই ঝড়ের শক্তি ছিল বুলবুলের মতোই। বুলবুলের তাণ্ডবে সুন্দরবনের ক্ষতির শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্রবন্দরসহ উপকূলীয় এলাকায় শনিবার দুপুর থেকে ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।’

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের উদ্ভব

সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড় মাতমো গত অক্টোবরের শেষে ভিয়েতনাম হয়ে স্থলভাগে উঠে আসে। সেই ঘূর্ণিবায়ুর অবশিষ্টাংশ ইন্দোনেশিয়া পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে এসে আবার নিম্নচাপের রূপ নেয়।

বারবার দিক বদলে নিম্নচাপটি আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এসে বুধবার রাতে তা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। তখন এর নাম দেওয়া হয় বুলবুল।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তরের নির্ধারিত তালিকা থেকে ধারাবাহিকভাবে এই অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেওয়া হয়। বুলবুল নামটি নেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে।

এসআর/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!