প্রবর্তকের জায়গায় রাতারাতি উঠল মাদকাসক্ত যুবকের ‘স্বপ্নে দেখা’ মন্দির!

শুক্রবারও বসেছিল মাদকের আসর

তার অভ্যাস মদ আর ইয়াবা সেবন করা। এই মাদকাসক্তির জন্য বেশ কিছুদিন ছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকার ‘দৃষ্টি’ নামের এক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। কোর্স শেষ না করেই মাসদেড়েক পর সেখান থেকে পালান তিনি। আশ্রয় নেন প্রবর্তক সংঘে মামার বাসায়। একপর্যায়ে সেখান থেকে মামাদের তাড়িয়ে নিজেই ঘরটির দখল নেন। প্রতি রাতে সেখানে বসান ইয়াবা সেবনের জমজমাট আসর। এর মধ্যেই তার মাথায় আসে অন্য বুদ্ধি। এক সকালে তিনি রীতিমতো বোমা ফাটালেন। একালের লালসালুর নিখুঁত গল্প! রাতে নাকি তিনি স্বপ্নে দেখেছেন দেবদূতরা আসছেন তার নিজের ঘরে। যেই দেখা সেই কাজ! মামার ভাড়াবাড়ির টয়লেটেই রাতারাতি গড়ে তুললেন শিবমন্দির। আশেপাশের প্রতিবেশীরা হতবাক এমন কাণ্ডে। আগের রাতেও ওই ঘরে ইয়াবাসেবীদের আড্ডা জমেছিল গভীর রাত পর্যন্ত। অথচ সকালেই হঠাৎ ‘শিবমন্দিরের’ গল্প!

চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ এলাকার প্রবর্তক পাহাড়ের জায়গা দখল করে রাতারাতি ‘মন্দির’ গড়ে তোলার এই কাণ্ড যার হাতে ঘটেছে, তার নাম সুমীর চৌধুরী মন্টি। নিয়মিত ইয়াবা সেবনের কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে— ‘সবারই তো খারাপ অভ্যাস থাকে।’ আবার জায়গা দখলেও অনুতাপ নেই তার মধ্যে, বললেন— ‘পূজার মন্দির করা খারাপ কিছু নয় সেটি যার জায়গাতেই হোক।’

স্থানীয়রা জানান, পাঁচলাইশ এলাকায় প্রবর্তক পাহাড়ে বহু বছর আগে একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন সুকুমার সেন নামের এক ব্যক্তি। তার মৃত্যুর পর সুকুমার সেনের ছেলে ধীমান, বিশ্বজিৎ ও প্রলয় সেন সেখানে থাকতেন। কিন্তু সেই বাসায় হঠাৎ আবির্ভাব হয় তাদের ভাগ্নে সুমীর চৌধুরী মন্টির। প্রবর্তক পাহাড়ের প্রহরী নিখিল গোস্বামী বলেন, ‘বিশ্বজিৎ, ধীমান ও প্রলয় সেন ঘরটিতে থাকার সময় মাঝে মধ্যে সেখানে যাওয়া আসা করতো সুমীর। কিন্তু হঠাৎ শুনি কৌশলে তার মামাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে সে ঘরটি দখলে নিয়েছে।’

‘মন্দির’ ঘিরে লাল-নীল বাতি— প্রবর্তক সংঘের জায়গা দখলে মাদকাসক্ত যুবকের কাণ্ড!
‘মন্দির’ ঘিরে লাল-নীল বাতি— প্রবর্তক সংঘের জায়গা দখলে মাদকাসক্ত যুবকের কাণ্ড!

যদিও সুমীরের ভাষ্য, ঘরটি তাকে দিয়ে অন্য কোথাও বাসা নিয়েছেন তার মামারা। কিন্তু কোথায় গেছেন কিংবা তার মামাদের ফোন নম্বর আছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে মাদকাসক্ত সুমীর বলেন, ‘তাদের (মামাদের) সাথে আমার যোগাযোগ নেই।’

কিন্তু সুমীরের মামা ধীমান সেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বললেন, ‘ঘরটি আমরা তাকে (সুমীর) দেইনি, বরং কৌশলে আমাদের সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, কৌশলে সুমীর তার মামাদের বাসাটি থেকে বের করে দেওয়ার পর সেখানে প্রতি রাতেই ইয়াবাসহ মাদকের আড্ডা বসাতেন। পরে সেই আড্ডাকে পাকাপোক্ত করতেই স্বপ্নে দেবদূতের দেখা পাওয়ার গল্প সাজিয়ে মন্দির গড়ে তোলার কথা বলছেন সুমীর। গত শুক্রবার রাতেও সেখানে বসেছিল মাদক সেবনের আসর। প্রতি রাতের মতোই মোটরসাইকেলে করে অনেক লোক ওই বাড়িতে ইয়াবা সেবনের আসর জমিয়েছিল।

তবে সুমীর একবাক্যে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি মদ-ইয়াবা খেতাম তা সবাই জানে। কিন্তু আমি স্বপ্নে দেবদূতদের দেখে মন্দির করলাম।’ তবে টয়লেটে মন্দিরের মত পবিত্র স্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের তো জানা থাকার কথা, যেখানে মন্দির গড়ে তোলা হয় সেইটি এমনিতেই পবিত্র হয়ে যায়।’

এ ব্যাপারে প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুনেছি রাতারাতি প্রবর্তক পাহাড়ে একটি শিব মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে। এই ব্যাপারে আমাদের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। আমরা কাল সেখানে গিয়ে সবকিছু দেখে ব্যবস্থা নেবো।’

এএ/এডি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!