প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি 1প্রতিদিন ডেস্ক: প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি আাব্দুল হামিদ। সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি শনিবার গ্রহণ করেছেন বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নুল আবেদিন।

তিনি জানান, প্রধান বিচারপতি সিঙ্গাপুর হাইকমিশনে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আমরা আজকে সেটি গ্রহণ করেছি।
গত ২ অক্টোবর থেকে ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে বিভিন্ন টিভি স্ক্রলে খবর প্রচারিত হলেও এতোক্ষণ এ ব্যাপারে সরকারি কর্তৃপক্ষ থেকে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দেশের দুএকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল সিঙ্গা্পুর থেকে কানাডা রওনা হওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা পদত্যাগপত্রে সই করেন। তার পারিবারিক সূত্রে এই তথ্য জানা যায়। এ ব্যাপারে সিনহার স্ত্রী ও তার ‍দুই মেয়ে ভূমিকা রাখেন।

বিচারপতি এস কে সিনহার ৩৯ দিনের ছুটি গতকাল শুক্রবার শেষ হয়েছে। তিনি বর্তমানে কানাডায় তার ছোট মেয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।
গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, প্রধান বিচারপতির ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। প্রধান বিচারপতির ছুটির মেয়াদ না বাড়ালে আজ থেকে তিনি অনুপস্থিত গণ্য হবেন বলে জানান মন্ত্রী।

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুর থেকে কানাডা গেছেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে গত সোমবার রাতে সিঙ্গাপুরে পৌঁছান তিনি। কানাডায় প্রধান বিচারপতির ছোট মেয়ে আশা সিনহা থাকেন।

গত ২ অক্টোবর থেকে ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় যান তার বড় মেয়ের কাছে বেড়াতে। গতকাল ১০ নভেম্বর ছুটি শেষ হলেও তার দেশে আসা বা ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

প্রধান বিচারপতি গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার সময় সাংবাদিকদের জানান যে তিনি ছুটি শেষে ফিরে আসবেন। দায়িত্বও পালন করবেন। বলেছিলেন, ‘আমি পালিয়ে যাচ্ছি না। আবার ফিরে আসব।…আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগ যাতে কলুষিত না হয় সে জন্যই সাময়িকভাবে যাচ্ছি।’

তবে প্রধান বিচারপতির দেশে ফেরা ও দায়িত্বগ্রহণের বিষয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘তার (সিনহা) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রধান বিচারপতির পদে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করা সুদূরপরাহত।’

এদিকে আগামী ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের কোনো কার‌্যক্রমে নেই প্রধান বিচারপতি সিনহার নাম। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন। উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। এ পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল।

রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটিকালীন অর্থাৎ ২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অথবা পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।

এর আগে অবকাশকালীন ছুটি শেষে সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন ২ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, অসুস্থতার কারণে প্রধান বিচারপতি সিনহা ২ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। তবে বিদেশ যাওয়ার আগ পর‌্যন্ত এ নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেননি প্রধান বিচারপতি। ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার রওনা হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি অসুস্থ নন, তিনি সুস্থ আছেন।

পরদিন ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের একটি বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে উপস্থিত চার বিচারপতি- মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসেন হায়দারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন।

বিবৃতিতে জানানো হয়, পরে প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে এসব অভিযোগের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের (পাঁচ বিচারপতি) পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। ২ অক্টোবর তিনি উল্লিখিত বিচারপতিদের কোনো কিছু অবহিত না করে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আগামী বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তার মেয়াদ রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!