প্রধানমন্ত্রী কিছু ক্ষেত্রে জাতির পিতাকেও ছাড়িয়ে গেছেন : এইচটি ইমাম

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কিছুক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকেও ছাড়িয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরই রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির উদ্যোগে ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর : তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকদের কাছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমানের প্রশ্ন ছিল ; বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণের কথা বলেছেন। কিন্তু আমাদের দেশ এখনো একজন প্রধানমন্ত্রী নির্ভর। সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেই হস্তক্ষেপ করতে হয় কেন?

আলোচকদের মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তরের আমন্ত্রণ পান প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা একজন কারিশমাটিক লিডার। শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব পুরোপুরো বঙ্গবন্ধুর মতোই। পিতার সকল গুণই তিনি পেয়েছেন। কিছুক্ষেত্রে তিনি তার পিতাকেও ছাড়িয়েছেন। সবাই ভাবেন- তিনি হয়তো সব ক্ষমতার উৎস। মন্ত্রীরা নিজেরা কাজ করেন, তার অধীনস্ত বিভাগ কাজ করে। এখন উপজেলা চেয়ারম্যানরা কাজ করছেন। ইউপি চেয়ারম্যানরা কাজ করছেন। টপ টু বটম লেভেলে ক্ষমতার শ্রেণী বিন্যাস হয়েছে। এভাবে বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দিয়ে দিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক দুই সেনাশাসক ও অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী দুই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তারা পাকিস্তানের লোক ছিলেন। দেশের জন্য কিছুই করেননি। এরশাদ কিছু করলেও তা অন্য দিক দিয়ে। বঙ্গবন্ধুই দেশকে গড়ে তুলেছেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা তা ধরে রেখেছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর এ রাজনৈতিক উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভাবে বড় সুবিধা পেয়েছিলেন জিয়া ও এরশাদ। তারা দুজন সামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তার ছত্রছায়ায় রাজনৈতিক দল খুলেছিলেন। পরে দুজনেরই ক্ষমতারোহনকে অবৈধ ঘোষণা করে আদালত। এরশাদের নয় বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সোচ্চার হলেও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরলেও দুটি দলই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে তোষণ করে এসেছে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী ফাল্গুনি হামিদ জানতে চেয়েছেন; ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গৌরব ঐতিহ্য সঙ্গে যায় কী না? এর উত্তরে প্যানেল আলোচকদের মধ্যে থেকে চট্টগ্রামের মেয়র ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগ করতাম আদর্শ ও নীতির মধ্য দিয়ে। তখনকার সাথে এখনকার সময়ের ব্যবধান বা দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। এখন অনেকেই ছাত্রলীগ করেন, যারা জানে না সংগঠনটির মূলনীতি কি? ইতিহাস কি। রাজনীতিতে যে নীতি-আদর্শ ধারণ করা উচিত, তা বর্তমানের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনুপস্থিত।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো মানুষ তৈরির কারখানা হিসেবে হবার কথা থাকলেও হয়েছে আখের গোছানোর কারখানা। মান অনেক নেমে গেছে। এখন নেতাদের পদলেহন করলেই যাকে তাকে পদ পদবি দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রলীগের কমিটি বানরের পিঠার মত ভাগ হয়। একেক নেতার ভাগে একেক ভাগ পড়ে। কোয়ালিটি মেনটেইন করা হয়না। এজন্য ছাত্র সংগঠন বা তাদের নেতারা একা দায়ী নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন ভিসি-প্রোভিসি হবার জন্য ছাত্রনেতাদের কাছে গিয়ে বসে থাকেন। সেখানে এই ধরণের অভ্যাস বা চর্চা হওয়াটা স্বাভাবিক।’

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘সংস্কৃতির সঙ্গে ছাত্রলীগের আগে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। মান নেমে যাবার পেছনে আমাদেরও দায় আছে। আমরা তাদের সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছি না।’ একই কথা বলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

আওয়ামী লীগের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর : তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করছে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকশনা উপ কমিটি। এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করছে সিআরআই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, রামুর সংসদ সদস্য ও প্রচার-প্রকাশনা উপ কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান প্রমুখ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!