প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চট্টগ্রামের নেতাদের হঠাৎ বৈঠক, নেতার ‘নালিশে’ কান দেননি দলনেত্রী

নগরের আগে ইউনিট-ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের কড়া নির্দেশ

চট্টগ্রামে নগর আওয়ামী লীগের ‘স্থবিরতা’ নিয়ে এক নেতা নালিশ দিয়েও সায় পেলেন না প্রধানমন্ত্রীর৷ বরং নালিশের পর ইউনিট-ওয়ার্ড-থানা পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করার সময় বাড়ল আরও তিন মাস। এর মধ্যে ইউনিট থেকে থানা কমিটির সম্মেলন শেষ করে নগর সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চট্টগ্রামের নেতাদের হঠাৎ বৈঠক, নেতার ‘নালিশে’ কান দেননি দলনেত্রী 1

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টা বৈঠক শেষে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চট্টগ্রামের নেতাদের হঠাৎ বৈঠক, নেতার ‘নালিশে’ কান দেননি দলনেত্রী 2

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সকল নালিশ শেষে দলকে সুসংগঠিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়ে বলেন, ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনে তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দদের যুক্ত করতে হবে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করে মে মাসে নগর সম্মেলনের পরামর্শও দেন নেত্রী। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে রমজান মাসেও সম্মেলন করতে পারবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ১৯ জন নেতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। দুপুর ১২টার দিকে তারা কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর তাদের নাস্তা দিয়ে আতিথেয়তা করা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পান। প্রায় দুই ঘন্টা বৈঠক শেষে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বৈঠক শেষে সেখানেই তারা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

ওই নেতা জানান, নগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে যুগ্ম সম্পাদক এম বদিউল আলম বদি নালিশের সুরে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে দলীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দীঘদিন কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয় না।

বদিউল আলম বদি এরপর নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরেন।

এর জবাবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির দলের সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের ১৩২টা ইউনিটের মধ্যে ১২০টি ইউনিট সম্মেলন সম্পন্ন করেছি। ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টির সম্মেলন সম্পন্ন করেছি।’

নগর আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত এবং বিএনপি-জামাতের যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য প্রতিহত করে আসছে উল্লেখ করে নেত্রীর সুনজর আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বাকি ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষ করতে চাই।’ ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সম্মেলন সম্পন্ন করতে নেতৃর সুপরামর্শও চান নাছির।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, সহ সভাপতি খোরশেদ আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম উদ্দীন চৌধুরী, জহিরুল আলম দোভাষ, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, কোষাধ্যক্ষ আবদুস সালাম, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সফর আলী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেলাল আহমদ, ড. নিছার উদ্দীন মঞ্জু, বিজয় কিষাণ চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর জাফর আলম চৌধুরী, আবদুল লতিফ টিপু ও সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার।

২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সাধারন সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের নগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো নতুন কমিটি হয়নি। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাবার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর আগে, সর্বশেষ ২০০৬ সালে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পর এম এ মান্নান-মহিউদ্দিন চৌধুরীর কমিটি ভেঙে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এ সময় সম্পাদক হয়েছিলেন কাজী ইনামুল হক দানু। ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দানু মারা যাবার পর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন প্রবীণ নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।

আরএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!