প্রধানমন্ত্রীর ছোঁয়ায় বদলে গেল চট্টগ্রামের সেলিনার জীবন

৪ মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব আ জ ম নাছিরের

৪ কন্যা নিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর গুমানমর্দ্দনের স্বামী পরিত্যক্তা গার্মেন্টসকর্মী সেলিনা আকতারের সংসার। গার্মেন্টসে চাকরি করে কোনমতে নিজের আর চার মেয়ের পেটের ভাত যোগাড় করা ৪০ বছর বয়সী এই নারীর ছিল না মাথা গোঁজার একটা নিজস্ব ঠিকানা। অভাবের তাড়নায় বড় দুই মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দেন তিনি। কিন্তু মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বাড়ি পেয়েই বদলে গেছে সেলিনা বেগমের জীবন। যে সৌভাগ্য অনেকেরই হয় না, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে নিজেও হলেন ধন্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ঘোষণা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের কোনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না’। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার প্রতিফলনেই ‘সকলের জন্য আবাসন’ প্রকল্পে সামিল হয়ে দেশের প্রতিটি থানায় একটি করে গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ কর্মসূচি নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্ভিস ডেস্ক স্থাপনের উদ্যোগও নেয়। রোববার (১০ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি গৃহ হস্তান্তর ও সার্ভিস ডেস্ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সারা দেশে ৪০০ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন ঘরের চাবি।

এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামেও ১৬ থানায় ১৬ জনকে জায়গা সহ ঘর করে দেয় পুলিশ। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনে ওই ১৬ পরিবারের কাছে চাবি হস্তান্তর করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চসিকের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে জায়গার মালিকানাসহ ঘরের চাবি পেয়েছেন চট্টগ্রামের সেলিনা বেগম। ওই ঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আ জ ম নাছিরের নজরে পড়ে পেয়েছেন নগদ ৫০ হাজার টাকা ছাড়াও চার মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার আশ্বাসও। যাদের পড়াশোনার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন চট্টগ্রামের এই সাবেক মেয়র।

পুরো ব্যাপারটা এখনও স্বপ্নের মত সেলিনা বেগমের কাছে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বললেন, ‘আমি এখন নিজেই নিজেকে চিনতেছি না। আমি কখনো ভাবি নাই আমার জীবন এমন হবে। ডাস্টবিনের মধ্যে পড়ে আছি যে, এখান থেকে আমাকে তুলে নিয়ে পুলিশেরা যে সম্মান দিছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলবো— এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। কিন্তু পুলিশের মাধ্যমে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথাও বলছি। আবার চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র (নাছির উদ্দিন) আমাকে আজকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে গেছেন। আমাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বলেছেন মেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব তিনি নেবেন।’

আবারও পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে মেয়েরা ভীষণ খুশি— এমন কথা জানিয়ে সেলিনা আকতার বলেন, ‘আমার চতুর্থ মেয়ে পেটে থাকতে স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। গার্মেন্টসে চাকরি করে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে ৪ মেয়ে নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম। বড় দুইটা মেয়েকে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়িয়ে করোনার সময়ে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। মেয়র নাছির বলেছেন মেয়েদের পড়াশোনা করাতে চাইলে উনি পুরো দায়িত্ব নেবেন। আমি মেয়েদের এটা বলেছি। তারা খুব খুশি। হঠাৎ করেই আমার জীবনটা কেমন যেন বদলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আকরাম স্যার (হাটহাজারী থানা পুলিশের সদস্য) আর একজন মহিলা পুলিশ আমাকে আ জ ম নাছিরের বাসায় নিয়ে গেছে। উনি অনেক সুন্দর করে আমার সাথে কথা বলেছেন। অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। বলেছেন নিয়মিত জীবনধারণের জন্যও একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহর কাছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি, আ জ ম নাছিরের জন্যও দোয়া করি।’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেলিনা বলেন, ‘পুলিশ আমাকে কই থেকে কই নিয়া গেল আমি নিজে বিশ্বাস করতে পারি না। আমার এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার আর সেক্রেটারি তৈয়ব ভাইয়ের কারণে পুলিশের সাথে আমার যোগাযোগ হইছে। তাদের জন্যও আল্লার কাছে দোয়া করি।’

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ তেমনই এক কর্মসূচি। উনার কর্মী হিসেবে সেই কর্মসূচিতে ঘর পাওয়া একজনের জীবিকার সংগ্রামে পাশে দাড়াতে পেরে ভাল লাগছে। প্রধানমন্ত্রীর এই এক উদ্যোগে দেশে এমন হাজার হাজার সেলিনার ভাগ্য বদল হয়েছে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!