প্রতীক পেয়েই ভোটযুদ্ধে নেমে গেলেন আনোয়ারার প্রার্থীরা

নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রার্থীরা নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে পুরোদমে প্রচারণায় নেমে গেছেন।

এবার আনোয়ারায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করছেন ৬ প্রার্থী। আর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বৈরাগ ইউনিয়নের নোয়াব আলী, বটতলীর অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরী ও বারখাইনে হাসনাইন জলিল শাকিলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হতে আর কোনো বাধা থাকছে না। এরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। বাকি ৬ ইউপিতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ছয় নেতা।

উল্লেখ্য, আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনোয়ারার ইউনিয়নগুলোতে ব্যালেট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

দেখা গেছে, উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন।

ভোটাররা বলছেন, এই মুহূর্তে বড় আলোচনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তি ইমেজ। তবে এবার নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজের প্রভাব থাকছে। পুরাতন চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে নতুনের চেয়ে পুরাতনদের ওপর বেশি ভরসা রাখছেন নতুন প্রজন্মের ভোটারা। অনেক দলীয় নেতাকর্মীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীগ নেতা।

বারশতের ভোটার এমরানের মতে, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য পদে নতুনের চেয়ে এগিয়ে আছেন পুরাতনরাই। তাই তিনি পুরাতনের ওপর ভরসাটা একটু বেশি রেখেছেন বলে জানান।

২ নম্বর বারশত ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ূম শাহ্’র সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আমিনুল হক, ৩ নম্বর রায়পুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জানে আলমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিদ্রোহী রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিন শরীফ ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল কাদের। ৫ নম্বর বরুমচড়া ইউনিয়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও সাবেক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর, ৭ নম্বর আনোয়ারা সদর ইউনিয়নে অসীম কুমার দেবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দিদারুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম, ৯ নম্বর পরৈকোড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফ চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসান জিয়াউল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুল হক, ১০ নম্বর হাইলধর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ নেতা হাইলধর ইউনিয়নে মোহাম্মদ সোলেমান ও আবু তাহের।

চাতরী ইউনিয়নে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, সাধারণ মানুষের সমর্থন পাচ্ছি বেশি। আশা করছি নতুন প্রজন্মের ভোটাররা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না।

বারশতের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, ‘গতবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি এলাকায়। এবারও ভোটাররা উন্নয়নের কথা চিন্তা করে নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আমি নির্বাচিত হলে বারশত ইউনিয়নকে একটি ডিজিটাল ইউনিয়নে রূপান্তর করা হবে। ডিজিটালসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব।’

এদিকে কোনো প্রার্থী যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন না করতে পারেন, সেদিকে সার্বিক নজরদারি রাখছেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন।

শেখ জোবায়ের আহমেদ আরও জানান, ‘সোমবার উপজেলার চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচনী কাজকর্ম পরিচালনার জানানো হয়েছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলা প্রশাসন প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়েছে। অতীত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রার্থীরা বলেন, ভোটের আগের রাতে কিছু প্রার্থী ভোটারদের মধ্যে টাকা বিলি করেন। এটা বন্ধ করতে হবে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুধু প্রধান রাস্তা দিয়ে টহল দেয়। এটা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নাও থাকতে পারে।

এ জন্য পাড়া-মহল্লার রাস্তাগুলোতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করতে হবে। প্রার্থীদের বক্তব্য শোনার পর ইউএনও বলেন, কারও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো উচিত। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য প্রার্থীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!