প্রতিবন্ধীকে ইয়াবার মামলায় ফাঁসানোর হুমকি ওসির, জামাই আদরে কিশোর গ্যাং

কিশোর গ্যাংয়ের হামলার বিচার চাইতে গিয়ে থানার ওসির রোষানলে পড়েছেন এক প্রতিবন্ধী। আসামিদের না ধরে ওসি এখন উল্টো ওই প্রতিবন্ধীকে ইয়াবার মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন।

এই কাণ্ডে নাম উঠে এসেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের। তার রোষানলে পড়ে প্রাণ ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র থাকতে হচ্ছে সেই প্রতিবন্ধী তরুণ ও তার পরিবারকে।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতার অপব্যবহার ও মর্মন্তুদ ঘটনার বিবরণ জানানা ভুক্তভোগী চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা প্রতিবন্ধী মো. এরশাদ। সেই সঙ্গে জীবন বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলাকারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানা পুলিশ তাদের পক্ষ নিচ্ছে। ফলে বিচার না পেয়ে আমাকে গ্রামছাড়া হতে হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাবেদ ঘটনা চাপা দিতে মানসিকভাবে অত্যাচার করছেন। এমনকি ফেসবুক লাইভে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলতেও বাধ্য করা হয়েছে আমাকে।’

এছাড়া এ ঘটনার নেপথ্যে মোহাম্মদ আলী নামে এক স্থানীয় ‘সাংবাদিক’ও জড়িত বলে জানান এরশাদ।

জানা গেছে, হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড ওবাইদুল্লা নগর এলাকার বাসিন্দা মো. এরশাদ (২৭)। জন্মের পর থেকেই তার দুটি হাত নেই। ভিক্ষাবৃত্তিতে না গিয়ে মোবাইল মেকানিকের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারে হাল ধরেন তিনি। বাড়ির পাশে ‘মায়ের আশা’ নামে তার একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান রয়েছে।

১৯ জুন হামিদুল ইসলাম, হৃদয়, ফারুকসহ স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা এরশাদের দুটি ছাগল ‘বিরিয়ানি খাবে’ বলে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে বাধা দেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৩ জুন দলবল নিয়ে তার দোকানে এসে ভাঙচুর চালায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। সেই সঙ্গে প্রশাসনের সহায়তা নিলে এরশাদকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা।

প্রাণ বাঁচাতে ৭ জুলাই পুলিশের কাছে যান এরশাদ। হামিদুল ইসলাম, হৃদয়, ফারুক, সাকিব, নাঈম, খাইরুল আমিন, নাজিম ও সাদ্দামকে অভিযুক্ত করে হাটহাজারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তিনি।

কিন্তু মামলার পরই শুরু হয় নতুন বিপত্তি। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় হাটহাজারী থানার পুলিশ তাদের আটক না করে বরং ‘পক্ষ নিয়ে’ এরশাদকে চুপ থাকতে বলে। আর এই ঘটনাকে পাড়ার ‘ফুটবল খেলা সংক্রান্ত ঝামেলা’ বলে চালিয়ে দিতে চায়।

এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপা হলে ২১ জুলাই হাটহাজারী থানার ওসি মো. রফিকুল আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে এরশাদকে ধমক দেন। এছাড়া তাকে দোকান খুলতে চাপ দেন। এমনকি দোকান না খুললে তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো এবং প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। এ সময় এরশাদ আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে তাকে চুপ থাকতে বলেন ওসি।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খোঁজ নেব। বিস্তারিত জেনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

র‌্যাব-৭ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অধিনায়ক স্যারের সঙ্গে কথা বলবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!