প্রকৌশলীর কাণ্ড, সিটি করপোরেশনে ১১ বছর চাকরি ভুয়া সাটির্ফিকেটেই—নড়ে বসল দুদক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহ খানের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে দুদক সিটি করপোরেশনের কাছে এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে চার বছর মেয়াদি কোর্স পাশ না করে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই পদে চাকরি করে আসছেন এই প্রকৌশলী।

দুদক এই অভিযোগ পেয়ে চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিদা ফাতেমা চৌধুরীকে তদন্তের নির্দেশ দেন সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ। সেখানে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া কথা বলা হয়। গত ৩০ নভেম্বর এই প্রতিবেদন দাখিলের সময় শেষ হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রেরিত চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকেও।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মস্থলে যোগদান করেন আমির আবদুল্লাহ খান। ওই সময় তিনি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির যোগ্যতা অনুযায়ী পাশ করেননি। পরবর্তী তিন বছর চাকরি করার পর সারাদেশে বিশেষ পাশের আওতায় তিনি ২০১৬ সালে পাশ করেন। অথচ ২০১৩ সালের নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রত্যেকের সার্টিফিকেটের বয়স ছিল ৩০ বছর। ওই হিসেবে ওই নিয়োগের সময় আমির আব্দুল্লাহ খানের সার্টিফিকেটের বয়স ছিল ৩৭ বছর।

একইসঙ্গে তার নিয়োগ পেতে সুপারিশ করেছিলেন সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রকৌশল শাখার প্রধান প্রকৌশলী মোখতার আলম। সাবেক ওই প্রধান প্রকৌশলীর সম্পর্কে বোনের স্বামী হন আমির আবদুল্লাহ খান। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মোবারকখালী এলাকায়।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের জুন-জুলাই সেশনে চট্টগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগে ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করার পর আমির আবদুল্লাহ খান মূল সার্টিফিকেটের পরিবর্তে অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট জমা দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে। এই অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেটের সিরিয়াল নম্বর ৭১৮, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৪২৪, রোল নম্বর ৯২১৬৯ এবং সেশন ১৯৯২-৯৩। কিন্তু তিনি আদৌ ডিপ্লোমা পাস করেছেন কিনা— সে বিষয়ে সত্যতা যাচাই করতে ওই প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নেওয়া হলেও সেখানে পাসের সত্যতা মেলেনি।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমির আব্দুল্লাহ খান এখানকার সাবেক ছাত্র ছিল। তিনবার সে রেফার্ড পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেনি। তার কোর্স শেষ করার সার্টিফিকেট যেটা দেখিয়েছে, সেটা এখান যে কোনো ছাত্র কোর্স শেষ করার আগে নিতে পারে। এই অ্যাপিয়ার্ডকে মূল সনদ বলা যাবে না। সে যে সালে পাশ করার তথ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে তার নামে এখানে কোনো সার্টিফিকেট আসেনি। আমাদের রেজিস্ট্রার খাতায় নথিপত্রে তাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে— এমন কোনো তথ্যও নেই।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিদা ফাতেমা চৌধুরীকে কল করা হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পর মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন দেন। পরবর্তীতে আরও কয়েকবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘৩০ নভেম্বর আমি ট্রেনিংয়ে ছিলাম। তাই ব্যস্ত থাকায় এখনও তদন্তের প্রতিবেদনটি হাতে পাইনি। এ বিষয়ে খবর নেওয়া হচ্ছে।’

মুআ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!