প্রকল্পের ৬২ লাখ টাকা সীতাকুণ্ডের মেয়র ও দুই কাউন্সিলরের পকেটে

টেন্ডার ছাড়াই কাজ দেখিয়ে চার প্রকল্পের ৬২ লাখ টাকা মেরে দিয়েছেন সীতাকুণ্ড পৌরসভা মেয়রসহ দুই কাউন্সিলর। অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, পরস্পর যোগসাজশে বিনা টেন্ডারে সরকারি উন্নয়ন সহায়ক তহবিলের ৪টি প্রাক্কলিত প্রকল্প থেকে ৬২ লাখ টাকা ১১ হাজার ৯৮৯ টাকা আত্মসাৎ করেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা পৌরসভা মেয়র বদিউল আলম। তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলার পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। আত্মসাতের এই ঘটনায় তার সহযোগী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামসুল আলম আজাদ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিদারুল আলম এপোলোসহ আরও দুই ঠিকাদার।

এ বিষয়ে মেয়র ও কাউন্সিলরসহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা পৌরসভার এলাকায় ৪টি প্রাক্কলিত প্রকল্প এলাকায় দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ, উপসহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন ও উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এনফোর্সমেন্ট টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি রাজস্ব তহবিল প্যাকেজ নম্বর-৯ পোলট্রি ফার্ম প্রকল্পের নামে বিনা টেন্ডারে কাজ শেষ করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের কাজ শেষ দেখিয়ে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর দরপত্র আহবান করে উপজেলার পৌরসভা। এই প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ২২ লাখ ১৫ হাজার ৬৪৫ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উন্নয়ন সহায়ক তহবিল প্রকল্পে উপজেলার রামহরী মুন্সিপাড়ার সড়ক থেকে গোলাবাড়ি এলাকায় দেশের কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের বাড়ির সামনে পর্যন্ত ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫২ টাকা বিনা টেন্ডারে একটি প্রাক্কলিত প্রকল্পের কাজ কিছু অংশ করে কাজ শেষ করা হয়।

এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে উন্নয়ন সহায়ক তহবিল প্যাকেজ নম্বর-২৬ (ক) ঈদুলপুর শিবপুর সড়কের পাশে একটি প্রাক্কলিত প্রকল্পে কাজ শেষ করা হয়— তাও বিনা টেন্ডারে। পরবর্তী এই প্রকল্পের দরপত্র আহবান করে পৌরসভা। এ টেন্ডারে বরাদ্দ ছিল ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৩১০ টাকা। একই সঙ্গে উন্নয়ন সহায়ক প্রকল্প প্যাকেজ নম্বর-২৭ এর আওতায় পরানপুকুর অংশ থেকে অবশিষ্ট অংশ, দিঘীরপাড়া এলাকায় কার্পেটিংয়ের অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ কার্পেটিং এবং তাঁতীপাড়া সড়কের উন্নয়ন করা হয়। এই তিন প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৮২ টাকা। ওই প্রকল্পগুলো বিনা টেন্ডারে কাজ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিনা টেন্ডারে সরকারি উন্নয়ন সহায়ক প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ উন্নয়ন ও সংস্কার না করে মোট ৬২ লাখ ১১ হাজার ৯৮৯ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এতে বিভিন্ন সময়ে সরকারি প্রকল্পগুলো থেকে এভাবে জালিয়াতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বদিউল আলম বলেন, ৪টি প্রকল্পের মধ্যে দুটি প্রকল্পের কাজ নিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের কোনও অভিযোগ নেই। বাকি দুটি প্রকল্পের ফাইল ও কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক। বাকি বিষয়টি দুদক কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিনা টেন্ডার ও উন্নয়ন কাজ শেষ না করে পুরো প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সীতাকুণ্ড উপজেলা পৌরসভা প্রাক্কলিত প্রকল্প এলাকায় দুদকের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় প্রকল্পগুলোর নথিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও হয়েছে। এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যগুলো যাচাই বাছাই শেষে প্রতিবেদন তৈরি করে পরবর্তী তদন্তের জন্য দুদক প্রধান কার্যালয় বরাবরে সুপারিশ করা হবে।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!