পোড়া কারখানার নামে বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে ফেঁসে যাচ্ছে প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ
এনবিআর—দুদকে অভিযোগ, তদন্তে কাস্টমস—ফায়ার সার্ভিস
পোড়া কারখানার নামে বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে ফেঁসে যাচ্ছে প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে পণ্য খালাস নেওয়ায় অভিযোগ গেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। নগরের বায়েজিদ জালালাবাদ এলাকার প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ লিমিটেডের মালিক কে এইচ লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে উক্ত অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে কে এইচ লতিফুর রহমানের মালিকানাধীন প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ লিমিটেড কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। কিন্তু কারখানা পুড়ে গেলেও দুই মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার আওতায় ৭৫টি ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) নিয়ে পণ্য চালান খালাস করেছে। প্রতিষ্ঠান নেই অথচ ওই প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড সুবিধায় পণ্য আনার অনুমতি পাওয়া খুবই রহস্যজনক। এতে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট উধ্বতন কর্মকর্তারা।
অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে কারখানা আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরেও এ ইউপি অনুমোদন পেয়েছে। গত ৩১ মার্চ প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের বিরুদ্ধে এনবিআর ও দুদকে অভিযোগ দায়ের করেন সাইফুল হক মৃধা নামের একজন বন্ডার। এ অভিযোগের পর শুরু হয়েছে তদন্ত।
অপরদিকে বিষয়টি নিয়ে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে কাস্টমস বন্ড কতৃর্পক্ষ। আগুন লাগার পরে কারখানার মালামাল নিরাপদে রাখার স্বার্থে নিয়ম মেনে বন্ড কাস্টমস থেকে অস্থায়ী গুদামের অনুমতি নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস বন্ডের কর্মকর্তারা বলেন, প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ লিমিটেডের ওয়্যারহাউসে পলিয়েস্টার ইয়ার্ন, কটন ইয়ার্ন এবং ডুপ্লেক্স বোর্ডের পরিমাণই বেশি ছিল। এক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউসটিতে ১৮৬ টন পণ্য অনুমোদন থাকলেও রেজিস্টার অনুযায়ী সেখানে পণ্য ছিল ৪৪৩ টন। তবে কি পরিমাণ পণ্য পুড়ে গেছে, সেটি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিসও বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। তবে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরে বন্ধ কারখানার অনুকূলে ইউপি দেয়ায় একজন বন্ড কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এইচ লতিফুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়েছে তাতে আমি ব্যবসা গুটিয়ে বসে থাকবো তা হয় না। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরে কারখানার মালামাল রাখার স্বার্থে আমি বন্ড কাস্টমস থেকে অস্থায়ী গুদামের অনুমতি নিয়েছি। এখানে কোন কিছু নিয়মবিহভূর্ত হয়নি। যা কিছু হয়েছে তা কাস্টমস বন্ড আইন অনুয়ায়ি হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার এ কে এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘কারখানা আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধা আওতায় ৭৫টি ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) নিয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তদন্ত করছে। আর চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট পক্ষ থেকে একজন সহকারী বন্ড কমিশনার নেতৃত্বে চার সদস্য কমিটি স্ব—শরীরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অভিযোগ উঠেছে বীমার টাকা পাওয়ার লোভে প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে বন্ড কমিশনার বলেন, ‘প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের পক্ষ থেকে বীমার টাকা পাওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তদন্ত রির্পোট গুরুত্বপুর্ণ।’
এদিকে প্রিমিয়ার এক্সেসরিজে আগুন লাগার ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের প্রদত্ত ক্ষতিপূরণ সনদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। যে গুদাম পূর্ণ থাকলেও এক কোটি থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি পণ্য রাখার সুযোগ নেই সেখানে অগ্নিকাণ্ডে ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে সনদ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। বীমা দাবির জন্যই ওয়্যার হাউজ প্রতিষ্ঠান প্রভাবিত করে এমন সনদ আদায় করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম বন্ড কাস্টম কর্তৃপক্ষও ফায়ার সার্ভিসের কাছে ওই গুদামের ক্ষতির খাত ওয়ারি প্রতিবেদন বা ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য চিঠি দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিআইসি (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল) ও প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের অগ্নিদুর্ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে বলে জানা গেছে।
কেএস