পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ এনে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ফিরিঙ্গিবাজারে

উল্টো এসে পুলিশ ধরলো হামলার শিকার ব্যক্তিদের

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নির্বাচনী পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ এনে ‘সংখ্যালঘুদের’ পুলিশী হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনাকে ‘সাজানো’ এবং নির্বাচন কেন্দ্রীক ‘ভীতিকর পরিবেশ’ তৈরির পাঁয়তারা বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগীদের পরিবার। কোতোয়ালী থানা পুলিশ সংখ্যালঘু পরিবারের তিন সদস্যকে আটক করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ফিরিঙ্গিবাজারে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের অনেকেই এখন পুলিশীর হয়রানির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সালাউদ্দিনের সমর্থকরা নিজেরাই ছিঁড়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ফাঁদ বানায়।

গত শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) রাতে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার মধ্যম নোয়া পাড়ার দোদল দাশ সর্দারের মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলাকালে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অনুসারী জুনায়েদ এবং কিশোর গ্যাং লিডার জুয়েল প্রকাশ কালা জুয়েলের নেতৃত্বে হিরণ, আরমানসহ ৩০ থেকে ৪০ জন হামলা চালায়।

ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মুরাদ বিপ্লবের পক্ষে ভোটার বেশি হওয়ায় আয়ংক ছড়াতে পোস্টার ছেঁড়ার সাজানো অভিযোগ তুলে এ হামলা চালানো হয় অভিযোগ রয়েছে। ‘সাজানো’ এ ঘটনার পর থেকে পুলিশকে ‘অতিউৎসাহী’ ভূমিকায় দেখা গেছে বলেও রয়েছে অভিযোগ।

অভিযোগ আছে, গত শনিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ফিরিঙ্গিবাজার নুয়া পাড়ায় মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অনুসারীদের কাছে হামলার শিকার ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে হামলার শিকার রাসু দাশ, বিজয় দাশ, নান্টু দাশ নামে তিন জনকে আটক করে নিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী দোদল দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাতে আমরা আমাদের মেয়ের জন্মদিন অনুষ্ঠানে ছিলাম। তখন হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অনুসারী জুনায়েদ এবং জুয়েল দাশের নেতৃত্বে ৩০-৪০ লোক এসে পোস্টার কেন ছিঁড়েছি জানতে চাইলে। জুয়েলকে বলি এখানে কেউ পোস্টার ছিঁড়ে নাই। এখানে একটা অনুষ্ঠান চলছে। তোমরা এখন বাইরে যাও। আমি বলেছি, যদি কোনো পোস্টার ছিঁড়া হয়ে থাকে অনুষ্ঠানটা শেষ করে আমরা তা দেখছি। এই কথা বলার সাথে সাথে, পলাশ নামে একজন আমার কলার ধরে বাইরে নিয়ে যায়। বাইরে গিয়ে দেখি কেউ কোনো পোস্টার ছিঁড়েনি। তখন তারা হুমকি দিয়ে বলে, এখানে কোনো বিপ্লব খাওয়ার সময় নেই। এ কথা বলে তার নিজেরাই পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর শনিবার বিকেলে পুলিশ এসে ওদের কাউকে ধরলো না।
আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার ভাতিজা রাসু দাশ, বিজয় দাশ, নান্টু দাশসহ তিন জনকে আটক করে নিয়ে যায়। এসময় পুলিশ আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। পড়ে গিয়ে আমার মাথা ফেটে যায়। পুলিশ যাওয়ার পরপরই জুনায়েদের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন এসে আমাদের উপর আবার হামলা চালায়। তখন আমার স্ত্রী গুরুতর আহত হন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

আরেক ভুক্তভোগী তারাপদ দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী রেজাউল ভাইকে সাপোর্ট করি। দলীয় মনোনয়ন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অনুসারীরা পোস্টার ছিঁড়েছে। এই দায় আমাদের উপর চালিয়ে আমাদের উপরই হামলা করা হয়েছে। আমাদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় আমরা তিন জনকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ, চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সাবেক কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবকে বাদ দিয়ে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এবার এই ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন হাসান মুরাদ বিপ্লব। তার অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যে আতংক ছড়াতে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অনুসারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

এএন

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!