পোষা পত্রিকায় ‘কচুকাটা’ করার হুমকি পিএইচপির এমডি ইকবালের (অডিও প্রথম পর্ব)

নিজের মালিকানাধীন পত্রিকায় মানহানিকর খবর প্রকাশের ইঙ্গিত দিয়ে সাংবাদিককে ‘কচুকাটা’ করার হুমকি দেন পিএইচপি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। দৈনিক আমাদের সময় ও এটিএন বাংলাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে পিএইচপি গ্রুপের মালিকানা রয়েছে। ইকবাল বাংলাদেশে রুয়ান্ডার অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ২০২০ সালে একুশে পদক পান সমাজসেবায় ‘অবদানের’ স্বীকৃতি হিসেবে।

সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া এক অডিও রেকর্ড থেকে জানা গেছে, ইকবাল তার পিএইচপি গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক ও উপদেষ্টা সম্পাদক আয়ান শর্মার বিরুদ্ধে মানহানিকর খবর প্রকাশের ইঙ্গিত দিয়ে তাকে ‘কচুকাটা’ করার হুমকি দিচ্ছেন একাধিকবার। ঢাকার অজ্ঞাত কোনো প্রভাবশালী মহল থেকে ‘ডাক’ আসবে বলেও তিনি ভয় দেখাচ্ছিলেন।

দৈনিক আমাদের সময় ও এটিএন বাংলাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে পিএইচপি গ্রুপের মালিকানা রয়েছে— এমন তথ্য রয়েছে পিএইচপি গ্রুপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে
দৈনিক আমাদের সময় ও এটিএন বাংলাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে পিএইচপি গ্রুপের মালিকানা রয়েছে— এমন তথ্য রয়েছে পিএইচপি গ্রুপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে

সেই কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ে প্রথম পর্ব এখানে হুবহু তুলে ধরা হল—

ইকবাল: আয়ান

আয়ান শর্মা: জ্বি, নমস্কার দাদা।

ইকবাল: আমার সাথে বাহার ভাই লাইনে আছে।

আয়ান শর্মা: জ্বি দাদা।

ইকবাল: আমার ছবি কোন দিন বাহার ভাই নিতে পারে নাই, তুমি জানো এটা? তোমার নামে চারটা মামলা হচ্ছে, মানহানির মামলা চারটা পাইছি এখনো।

আয়ান শর্মা: আচ্ছা আচ্ছা

ইকবাল: ঠিক আছে? আর এবার করবো হাইকোর্টের মধ্যে, তোমার উকিল ঠিক করতে হবে কিন্তু হাইকোর্টের মধ্যে, তোমারে কেউ ফ্রিতে সার্ভিস দিবে না।

আয়ান শর্মা: আচ্ছা।

ইকবাল: আমি বাহার ভাইরেও স্পিকার আনতে পারি, তুমি যদি চাও।তোমার সাথে আমার পাঙ্গা লেগে গেল কিন্তু, মনে রেখো। কচুকাটা করবো, কচুকাটা। মিডিয়া দিয়ে কচুকাটা করবো তোমারে। আমি হাত তুলি না কারো উপরে। মিডিয়া দিয়ে কচুকাটা করবো তোমারে। আমি যখন চারটা মামলা দিবো, আগের মামলা তো আছেই, এর পেছনে দৌড়াইতে পারবা? তোমারে আমি ন্যাংটা তিনটা নিউজ পেপারে আর টিভি চ্যানেলের মধ্যে করতেছি কালকে। তারপর তুমি মামলা লাগাও আমার পেছনে, এ পর্যায়ে কোর্টে গিয়ে দৌড়াইয়ো, টাকা খরচ কইরো, ঠিক আছে?

আয়ান শর্মা: আমি কী বেয়াদবি করলাম আপনার সঙ্গে?

ইকবাল: শোন, আমি তোমারে বলে দিচ্ছি আজকে। আমি তিনটা নিউজ পেপারে, তোমার মিডিয়ার মধ্যে তোমারে ন্যাংটা করবো, হ্যাঁ? আর টিভি চ্যানেলসহ। এরপর তুমি আমার বিরুদ্ধে মামলা কইরো। তারপর তুমি কত টাকা খরচ করতে পারো আমি দেখবো। যাবা পাঙ্গায়? চ্যালেঞ্জ নাও আজকে, বাপের বেটা হলে চেলেঞ্জ নাও।

আয়ান শর্মা: আমি চ্যালেঞ্জ কেন নিবো আপনার সাথে?

ইকবাল: না না, তোমার চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে। তুমি এটা কি ভ্যানিস করবা এখন নাকি করবা না? না দরকার নাই মনে কর? তাইলে কালকে থেকে কিন্তু কোর্টে অনেক কিন্তু দৌড়াইতে হবে কিন্তু। চারটা মামলা হবে কিন্তু। শোন, তুমি যেই…ধর তুমি মনে হয় আমার কানেকশন জানো না, মহসীন স্যারের কানেকশন আর আমার কানেকশনের মধ্যে অনেক বেশকমের হিসাব আছে। আমি চাই যে রেকর্ডিং কর এই কথাগুলা, কারণ তুমি আমারে প্যারাইন্না ফুরাইন্না করে পারবা না, কেন পারবা না জানো? তুমি এই দেশেই থাকতে পারবা না। তুমি যদি এত বড় হয়ে থাক সাংবাদিক, আমি মাফ চাইব।

আয়ান শর্মা: আমি কেন বড় সাংবাদিক হবো, এখানে মাফ চাওয়ার কি আছে?

ইকবাল: না না তুমি তো অনেক বড় সাংবাদিক হইছো।

আয়ান শর্মা: না না এখানে মাফ চাওয়ার কী আছে? আমার সাথে তো আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা নাই।

ইকবাল: তুমি তো…করছো মামলাতে, তোমার নামে আরও চারটা মামলা হবে, তুমি না জেনে যে কাজ করছো। কোর্টে হাজিরা তোমার দিতে হবে, রেডি হয়ে যেয়ো, ঠিক আছে? এরপরে তো তুমি কোথা থেকে ডাক পাবা এটা তুমি বুঝেই নিবা। তুমি ঢাকায় ডাক পাবা, চিটাগাংয়ে না। ইউ ক্যান নট ম্যানেজ এনিবডি ইন চিটাগং, তুমি ঢাকা থেকে ডাক পাবা। তোমারটা তুমি দেইখো। আমি কোন কানেকশনে চলি তুমি জানো? আমি তোরে কোর্টে কয়বার রান করাবো, আমার বাজেট আমি ঠিক করছি। তুমি যেখানে গিয়ে কেইস করার কর, আমি যশোর যাব দরকার হলে, হেলিকপ্টার নিয়ে যাবো। আর তুই যাবি বাসে। মাফ চাইতে পারবি নাকি মাফ চাইবি না? আমি কি দৌড়াবো তোরে? তুমি এভাবে নিউজ কেমনে আমার ছবি দিয়ে করলা? তুমি ক্ষমা চাবা নাকি কালকে তোমারে ধরে নিয়ে যাবো আমি?

হুমকি, মামলা ও জামিন

জানা গেছে, পাহাড় কেটে বাঁধ তৈরির পরিবেশবিধ্বংসী ঘটনায় পিএইচপি গ্রুপের এমডি ইকবাল হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার খবর প্রকাশ করার পর পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইকবাল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক আয়ান শর্মাকে টানা দুই দিন ফোন করে অশালীন ভাষায় হুমকি দেন। এ সময় তিনি সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ছাড়াও বহুবার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের নাম ব্যবহার করে সরাসরি তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া তিনি একই ধরনের হুমকি দিয়ে অন্তত ৭৯টি এসএমএস বা ক্ষুদে বার্তা পাঠান তার মোবাইল নম্বর থেকে।

এভাবে হুমকি ও অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইকবাল হোসেনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক ও উপদেষ্টা সম্পাদক আয়ান শর্মা। পরে আদালত শুনানি শেষে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগকে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চালিয়ে আদালতে ১০৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে মামলার গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ওই মামলায় চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালত আসামি ইকবালকে আদালতের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওই সমনটি পাঠানো হয়েছিল চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর ৪০/১ জাকির হোসেন রোডে ইকবালের ঠিকানায়। ইকবাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৫০০/৫০৬ ধারার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

সর্বশেষ ফৌজদারি ওই মামলায় রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) আসামি ইকবাল হোসেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল হালিমের আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে আদালত ১০০০ টাকার বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!