পোশাকশিল্পে করোনার কোপ, কমে গেছে রপ্তানি আয়

বিশ্বজুড়ে করোনার ভয়াবহতা যত বাড়ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগও তত বাড়ছে। বিশেষ করে সময় যতই গড়াচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সম্প্রতি অর্ডার বাতিলের পাশাপাশি কারখানা বন্ধ থাকায় দেশের বেশিরভাগ রপ্তানি আয়ের উৎস পোশাক খাতে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি আয় কমেছে। গত মার্চে এ খাতে আয় হয়েছে প্রায় ২২৬ কোটি ডলার। কমেছে ২০ শতাংশ।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৯৭ কোটি মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ কম।

অবশ্য রপ্তানি আয় আগে থেকেই কমতির ধারায় ছিল। চলতি অর্থবছরের ৮ মাস শেষে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে পোশাক শিল্পখাতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪১০ কোটি ডলার। যা কমেছে ৭ শতাংশের মতো।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু মার্চ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৭৩ কোটি ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ কম। মার্চে পোশাক রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ২২৬ কোটি ডলার। কমেছে ২০ শতাংশ।

মাসওয়ারি হিসেবে দেখা যায়, রপ্তানি আয়ে গত আগস্টে সাড়ে ১১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৭ শতাংশ, অক্টোবরে ১৭ শতাংশ, নভেম্বরে ১১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনার প্রভাব আসলে পড়বে এপ্রিল ও পরবর্তী মাসগুলোতে। তিনি দাবি করেন, মার্চে যে পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার বিপরীতে টাকা পাওয়া যায়নি। তাই অনেকে শ্রমিকের মজুরি দিতে সমস্যায় পড়েছেন।

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হন গত ৩১ ডিসেম্বর। এরপর বিভিন্ন দেশে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে শুরুতেই বিপাকে পড়ে চামড়া, কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানির মতো খাত, যা চীনের বাজারের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। নয় মাস মিলিয়ে চামড়া খাতে রপ্তানি কমেছে ১১ শতাংশ।

নয় মাসে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, টেরিটাওয়েল, হোমটেক্সটাইলসহ অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি কমেছে। আর পাট ও পাটজাত পণ্য, আসবাবপত্র, হস্তশিল্প, বাইসাইকেলের রপ্তানি বেড়েছে।

আগামী কয়েক মাসে রপ্তানি কমে যাওয়ার ধারা আরও গভীর হবে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি পূরণে সরকার দ্রুতই এগিয়ে এসেছে। তার বিপরীতে কারখানা বন্ধ, লে-অফ এখনও প্রাসঙ্গিক না।

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের পরিচালক মোহাম্মদ আতিক বলেন, তৈরি পোশাকই দেশের রপ্তানি আয়ের বৃহত্তর উৎস। এ খাত টিকে না থাকলে দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে।

এএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!