পেছনে ভাইয়ের লাশ, বিলাসী গাড়ি ছেড়ে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে সাংসদ ফজলে করিম

ভাইয়ের মৃত্যু হঠাৎ এলোমেলো করে দিল এবিএম ফজলে করিমের চারপাশের জগতটা। ম্যাক্স হাসপাতালের আইসিইউ থেকে বেরুনো বড় ভাইয়ের লাশটা যখন পাথরঘাটার পৈত্রিক বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো, হু হু করে কেঁদে উঠলেন চট্টগ্রামের রাউজানের এই দাপুটে সাংসদ। ঝাপসা চোখে একঝলকে তার কি মনে পড়ছিল, পিঠেপিঠি ভাইটাকে ঘিরে জীবনের সুখ-দুঃখের সাদাকালো-রঙিন মুহূর্তগুলো?

পেছনে ভাইয়ের লাশ, বিলাসী গাড়ি ছেড়ে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে সাংসদ ফজলে করিম 1

পাথরঘাটার বাড়ির সামনে তখন জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িটির সাংসদ ফজলে করিমের অপেক্ষায়। ভাইকে শেষ বিদায় দিতে যেতে হবে রাউজানে। কিন্তু না, বিলাসবহুল প্রিয় গাড়িটির দিকে তাকালেনই না তিনি। পাশ কাটিয়ে ফজলে করিম উঠলেন মরদেহ পরিবহনের গাড়ির সামনের সিটে, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের পাশে। সেই সিটের ঠিক পেছনে শোয়া আপন মেজ ভাই ফজলে রাব্বি চৌধুরী মানিকের কাফনপরানো নিথর দেহ। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) চট্টগ্রামের পাথরঘাটার বাসা থেকে এভাবেই ভাইয়ের শেষ যাত্রার সাথী হলেন ফজলে করিম। জেনে গিয়েছিলেন আগেই, ছোটবেলায় খেলার সঙ্গী বড় ভাইটাকে আর কখনোই পাওয়া হবে না। পাশে থেকে আর কখনোই মাথার ওপর ছায়া হয়ে দাঁড়াবে না পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তানটি।

পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা একেএম ফজলুল কবির চৌধুরীর সাত সন্তানের সংসারে ছিলেন পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। ফজলে রাব্বি চৌধুরী মানিক মেজ ছেলে আর ফজলে করিম চৌধুরীর সেজ। বয়সে বড় ছোট হলেও ব্যবধান ছিল কম। দুই ভাইয়ের শৈশব, কৈশোর কেটেছে বন্ধুর মতোই।

ফজলে রাব্বি চৌধুরী মানিক বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সকাল ১১টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুতে রাউজানের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পেছনে ভাইয়ের লাশ, বিলাসী গাড়ি ছেড়ে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে সাংসদ ফজলে করিম 2

সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী সুমন দে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্যারের মেজ ভাইয়ের সাথে সকাল সাড়ে ৯টায় আমার কথা হয়েছিল। স্যার তখনও সুস্থ। এর আধাঘন্টা পর সকাল ১০টায় আমাকে ফোন করে বললেন তাঁর বুকে ব্যথা করছে। সাথে সাথে আমরা তাঁকে একটি প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে গেলাম। একঘন্টার মাথায় স্যার মৃত্যুবরণ করেন।’

তিনি আরও জানান, শুক্রবার (৫ জুন) জুমার নামাজের পর রাউজানের গহিরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফজলে রাব্বী চৌধুরী মানিকের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সাংসদ ফজলে করিম এলাকাবাসীকে ভিড় না করতে রাউজানবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জানাজা শেষে মরহুমের নিজ বাড়ি বক্স আলী চৌধুরী জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে তার মরদেহ।

এফএম/এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!