পেকুয়ায় স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ, মাকে আটকে ধামাচাপার চেষ্টা

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক মেয়েটিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠান। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাত ১টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোয়াখালীতে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশসহ সমাজপতিরা ধর্ষিত ওই ছাত্রীর মাকে চাপ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে৤ এমনকি কালক্ষেপণ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওই ছাত্রীর মাকে বাড়িতে দুদিন আটকেও রাখে।

ধর্ষিত নারী একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পেকুয়া থানা পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন পুলিশ ও তার মা।

ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তরা হলেন পেকুয়া সদর ইউনিয়নের উত্তর পাড়া এলাকায় গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আরমান উদ্দিন ও মাহমুদ আলীর ছেলে মো. খোরশেদ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই দিন রাতে মেয়েটি খাবার খেতে রান্না ঘরে গিয়েছিলেন। রান্নাঘরটি বাড়ি থেকে পৃথক হওয়ায় মায়ের মুঠোফোনটি তার কাছে ছিল। আরমান নামের এক যুবক ওই মুঠোফোনে ফোন দেয়। এ সময় মুঠোফোনটি ওই ছাত্রী ধরে। মেয়েটির কাছে জানতে চায় চাচী কোথায়। এ সময় ওই ছাত্রী জানায় মা ঘুমিয়েছেন। আমি রান্না ঘরে ভাত খাচ্ছি। মুহূর্তের মধ্যে আরমান ও প্রতিবেশী খোরশেদ রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। পরে দুজনে মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে মাকে ওই বিষয়টি জানায় মেয়েটি। এমনকি ধর্ষক দুই যুবকের নামও স্পষ্ট করেছে।

এদিকে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশসহ সমাজপতিরা ধর্ষিতা ছাত্রীর মাকে চাপ প্রয়োগ করেন। তারা আইনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে ওই ছাত্রীর মাকে বাড়িতে দুদিন আটকে রাখে। শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে ঘটনার শিকার মেয়েটিকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

ছাত্রীর মা ও বড়বোন জানান, গোঁয়াখালী উত্তরপাড়ার গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ লাদেনের ছেলে আরমান ও মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে খোরশেদ আমার মেয়ে ও বোনকে ধর্ষণ করে। আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। সে ইজ্জত বাঁচাতে আর্তচিৎকার করেছিল। পরে সে অজ্ঞান হয়ে গেলে তারা ফেলে চলে যায়। ঘটনাটি কাউকে না জানাতে কয়েকজন প্রভাবশালী আমাদেরকে বাড়িতে আটকে রাখে। মুঠোফোনটিও তারা কেড়ে নেয়।’

তবে গোঁয়াখালী উত্তরপাড়ার সমাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদর ইউপির গ্রামপুলিশ জসিম উদ্দিন জানায়, ‘‌মেয়েটির মা স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করতে মূলত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিছু টাকাও মা নিয়েছে। চাপ দেওয়া হয়নি।’

সমাজ কমিটির আরেক নেতা হারুনুর রশিদ জানায়, ‘ধর্ষণ হয়েছে কি না আমরা নিশ্চিত নই। এরপরও বিষয়টি জটিল হওয়ায় নিষ্পত্তির চেষ্টা হয়েছিল।’

সদর ইউপির সদস্য মোহাম্মদ সাজ্জাদ বলেন, ‌‘তারা কেউ ভালো না। এর আগেও মেয়েটির বাড়িতে এ রকম বিচার হয়েছে।’

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘মেয়েটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!