পেকুয়ায় ‘মইন্যা’ডাকাত নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

পেকুয়ায় ‘মইন্যা’ডাকাত নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য 1পেকুয়া প্রতিনিধি : পেকুয়ায় যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলমের প্রধান সোর্স ছিলেন পুলিশের হাতে গ্রেফতার সেই মনিরুজ্জামান প্রকাশ মইন্যা ডাকাত। উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও উপকুলের ত্রাস মইন্যা ডাকাত সম্প্রতি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করায় তাকে কক্সবাজার কারাগারে প্রেরন করে। গ্রেফতার হওয়ার পর শীর্ষ এ জলদস্যুকে ঘিরে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভয়ংকর ও মুর্তিমান আতংক মনিরুজ্জামানের কাছে মানুষ অনিরাপদ ছিল। জিম্মিদশায় রাজাখালী ইউনিয়নের কোন মানুষ তার ধারাবাহিক অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে সাহস পাননি। গ্রেফতার হওয়ার পর তার এলাকা ও রাজাখালী ইউনিয়নে তার নানা অপকর্ম নিয়ে মুখ খোলতে শুরু করেছে সাধারন মানুষ। মনিরুজ্জামান (৪৮) উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বদিউদ্দিন পাড়ার আবুল হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যা, অস্ত্র মামলা, পুলিশ এসল্ট, চাঁদাবাজিসহ বহু মামলা রয়েছে। ৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। রাজাখালী ইউনিয়নের লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসীর প্রধান নেপত্যে ছিলেন রাজাখালী ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম। বদিউদ্দিন পাড়ায় একটি পেশি শক্তির বলয় রয়েছে। বিশেষ একটি স্বসস্ত্র গ্রুপ বদিউদ্দিন পাড়া, চড়িপাড়া কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল। ওই গ্রুপের সদস্যদের কাছ ছিল এলাকার মানুষকে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া। গত কয়েক বছরে ওই গ্রুপের চাঁদাবাজি আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। সমুদ্র নিকটতম এ ইউনিয়নের অবস্থান হওয়ায় সন্ত্রাসী, দস্যুতা, ছিনতাই কার্যক্রম অনায়াসে চালাচ্ছে এ গ্রুপটি। বিশাল জনগোষ্টি এ গ্রুপের সদস্যদের হাতে জিম্মি রাজাখালীতে। লবন চাষি, মৎস্যজীবি, বোটের মালিক, জেলে, ব্যবসায়ী ও প্রবাসিরা এ বাহিনীর হাতে জিম্মি ও অসহায় ছিল। ইয়াবা পাচার, মানব পাচার, অস্ত্র বিকিকিনিও এ গ্রুপের অন্যতম কাজ। আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে অনৈতিক কর্মকান্ডকে ঘিরে। এসবের মুল হোতা ওই যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর। বদিউদ্দিন পাড়াকে কয়েক যুগ ধরে উপকুলের মানুষ ভয় করে। জাহাঙ্গীরের পরিবার রাজাখালীতে আতংক। তাদের বিরুদ্ধে কেউ টু-শব্দ করেনা। জাহাঙ্গীরের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিল সদ্য গ্রেফতার হওয়া মইন্যা ডাকাত। ওই ত্রাস যুবদল নেতা জাহাঙ্গীরের নিকট আতœীয়ও বটে। সাহস ও অভিজ্ঞতায় অন্যদের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকতেন মইন্যা ডাকাত। জাহাঙ্গীর হঠাৎ কোটিপতি হয়েছেন। তার আয়ের অন্যতম উৎস মানব পাচার ও ইয়াবা পাচার কেন্দ্রিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসিরা জানায় রাজাখালীতে ইয়াবা কি সেটি পরিচিত হয়েছে জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে। তিনি অস্ত্র ব্যবসার সাথেও জড়িত। মাঝখানে এসব পাচারে তার একটু পতন হয়েছিল। গত ইউপি নির্বাচনের পর ফের সক্রিয় হন ওই যুবদল নেতা। চেয়ারম্যান ছৈয়দনুর তার আপন বড় ভাই। জাহাঙ্গীর যুবদল করেন। কিন্তু ছৈয়দ করেন আ’লীগের রাজনীতি। চেয়ারম্যান হওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপুর্ন নেতাদের সাথে হয়ে উঠেন ছৈয়দনুর আস্থাভাজন। এসুবাদে ছোট ভাই জাহাঙ্গীরের অন্যতম নির্ভরতার প্রতিক এ বড় ভাই চেয়ারম্যান। নিজে যুবদলের রাজনীতি করলেও বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন গত কয়েক বছরে। এখন কোন বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিলে সেটি অর্থ ও বড় ভাইয়ের ক্ষমতা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। গত ২০দিনের ব্যবধানে মনিরুজ্জামান ডাকাত ও তার ভাই আলিম্যা ডাকাত পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তারা দু’ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী। পেকুয়া থানা পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করে আলিম্যার বাড়ি থেকে। এর ১০দিনের মধ্যে মইন্যা ডাকাতকেও গ্রেফতার করে। বদিউদ্দিন পাড়ায় ১০-১২জনের একটি সন্ত্রাসি গ্রুপ রয়েছে। এ গ্রুপে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্রের মজুদ রয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছে। এ গ্রুপের অন্যতম সদস্য হচ্ছেন মইন্য ডাকাত তার ভাই আলিম্যা ডাকাত, আন্টু ডাকাত, আজমঙ্গীর তার ভাই সুজাঙ্গীর, রেজাউল করিম, এনাম ও সুন্দরীপাড়ার জাকের হোসেন এ গ্রুপের সদস্য। এরা সবাই একাধিক মামলার আসামি। জেলও খেটেছেন বহুবার। রাজাখালীতে অনেক গৃহবধু ও প্রবাসির স্ত্রীর সম্ভ্রম হানি করেছেন এ বাহিনী। তারা গত কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে এ জঘন্য কাজে লিপ্ত রয়েছে। বদিউদ্দিন পাড়া, চড়িপাড়ার আশপাশসহ রাজাখালীতে বেড়ে যায় অস্ত্রের ঝনঝনানি। সন্ধ্যা ও রাতে বিকট বন্ধুকের গুলির শব্দে জনমনে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রশাসন এর কোন বিহীত ব্যবস্থা করেননি। সাধারন মানুষ অনেকটা হতাশ হয়েছিলেন। মইন্যা ও আলিম্যা গ্রেফতারের পর কিছু স্বস্তি ফিরে এসেছে রাজাখালীতে। যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম ইয়াবা ও মানবপাচার থেকে কোটিপতি হয়েছেন। তার নির্ভরতা মইন্যা ও আলিম্যা ডাকাত। ওই গ্রুপ গত দু’বছর ধরে টোকেন দিয়ে আদায় করছে চাঁদা। একটি মুঠোফোন নাম্বার দেয়া হয়েছে টোকনে। বলা হয়েছে চাঁদা দেয়ার জন্য। টোকেনে নিবেদক লেখা হয়েছিল তুফান। জানতে চাইলে পেকুয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার জানায় আলম ও মনিরুজ্জামান দুর্ধর্ষ। তাদের কাছে মানুষ জিম্মি ও অসহায় ছিল। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যান্যদেরও গ্রেফতার চেষ্টা চলছে। ফেরারী আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান জোরদার রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের কাজ। কোন অপরাধিকে ছাড় দেয়া হচ্ছেনা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!