পেকুয়ায় পাহাড় কেটে সাবাড়, বনবিভাগ নীরব

কক্সবাজারের পেকুয়ায় শিলখালীতে চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড় খেকো স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে ওই স্থানে পাহাড়ে মাটি কেটে সাবাড় করার মহোৎসব চলছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের বারবাকিয়া বনবিটের আওতাধীন রিজার্ভ সম্পত্তি জবর দখলের কু-মানসে উত্তর জুম সাপেরগারায় পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। সাপেরগারা মনিরুজ্জামান চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অল্প উত্তরে মাটি কেটে পাহাড় সাবাড় করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিলখালীর ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন উত্তরজুম সাপেরগারায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি সম্পত্তি বেহাত করে বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য পাহাড়ের সর্বোচ্চ চওড়া সমতলে পরিণত করতে এ মাটি কাটার কাজ অব্যাহত রাখে। ওই এলাকার নমি উদ্দিনের ছেলে নুর আলম রিজার্ভ জায়গায় বসতি স্থাপনের জন্য পাহাড় কাটছে।

তরা আরও জানান, কয়েকবছর আগে নুরুল আলম রিজার্ভ জায়গায় অবৈধ বসতি স্থাপন করে। পাহাড়ে তার বসতির আয়তন বাড়াতে বাড়ির পূর্বপার্শ্বে মাটি কাটা কাজ বাস্তবায়ন করছে। সাবাড় করা পাহাড়ের ওই চওড়াটি জারুলবুনিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। মানুষের বসবাস উপযোগী করতে ভূমিদস্যু চক্র নুরুল আলমের কু-দৃষ্টি পড়ে পাহাড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানায়, নুরুল আলম সরকারি জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রচেষ্টা চালায়। প্রায় ৪ একরেরও অধিক বনভূমি তার কব্জায় এনেছে। পাহাড়ের চওড়া বিলীন করে সমতল ভূমি তৈরির কাজ ওই ব্যক্তি করছেন। ১০/১২ জন শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটছে নুরুল আলম।

মাটি কাটায় নিয়োজিত কয়েক জন শ্রমিক জানায়, পাহাড় কাটা মারাত্মক অন্যায় কাজ। এরপরও পেটের দায়ে জেনে-শুনে অন্যায় করছেন তারা।

দেখা গেছে, নুরুল আলমের বাড়ির উত্তর সীমানায় পাহাড়ি ছড়ার অবস্থান। ছড়াটি তার বাড়ির লাগোয়া। উপরে মাটি কাটছে। নিচের দিকে খননকৃত মাটিগুলি ফেলছে। নিঃসরিত ওই মাটি গড়িয়ে পড়ছে ছড়ায়। এতে করে ছড়াটির গতিপথ হ্রাস পেয়েছে। পানি চলাচল থেমে গেছে ওই মাটির নিঃসরিত পলির কারণের।

ওই ব্যক্তি দু’য়েক মাস যাবৎ পাহাড় কাটছে এবং পাহাড়ের চওড়া সমতল করেছে। প্রায় ফুটবল খেলার মাঠ সমান অংশ পাহাড়ের চওড়ায় মাটি কেটে সমতল করে। নুরুল আলমের ভিটার লাগোয়া ওই চড়াটি প্রবাহমান। মাটি নিঃসরণ হওয়ায় চড়াটি ভরাট হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। চড়াটির প্রশস্ত ওই স্থানে ক্ষীণ হচ্ছে।

এদিকে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলেও নেই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা। স্থানীয় লোকজন এ পাহাড় কাটার জন্য বনবিভাগকে দায়ী করছেন। তারা দেখলেও না দেখার ভান করে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাহাড় কাটায় নিয়োজিত নুর আলম বলেন, ‘আমি বাড়ি করার জন্য মাটি কাটছি। এ জায়গায় আমরা বসবাস করি। বনবিভাগ এসেছিল। তাদের সঙ্গে আমার বুঝাপড়া হয়েছে। টাকা না দিলে কাজ করছি কিভাবে। বাড়ি করতে বাধা দিলে আমাদেরকে এখান থেকে বিতাড়িত করতে বলুন।’

বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল গফুর মোল্লা বলেন, ‘কোন স্থানে পাহাড় কাটছে সেটি চিহ্নিত করব। অবশ্যই আইনের আওতায় এনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাহাড় কাটতে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) কাইয়ুম মাসুদ প্রথমে তার পরিচয় ও নাম জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে অনেকটা বিব্রতবোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নাম কেন জানবেন আপনি। নিউজও করার দরকার কি। আমরা সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!