পেকুয়ায় ত্রাণের ১৫ টন চালের মিলছে না হদিস

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ২১ দিনেও সরকারি বরাদ্দের ১৫ টন চালের কোনো হদিস মেলেনি। ত্রাণের চাল গায়েব নিয়ে পেকুয়ার কয়েকজন সংবাদকর্মী ২৫ এপ্রিল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে পুরো কক্সবাজারে তোলপাড় শুরু হয়। টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। চাল গায়েবের ঘটনায় তদন্ত শুরু হলে গা ঢাকা দেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে বারবাকিয়া হোসনে আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৫ টন চাল জব্দ করে পেকুয়া থানা পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আজম। তবে জব্দকৃত চাল ‘ত্রাণের চাল নয়’ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই মানবিক সহায়তা হিসেবে ৪০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ২৫ টন চাল বিলি করা হয়েছে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, রিকশাচালক ও অসহায় দুঃস্থ পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য গত ৩১ মার্চ টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী অনুকূলে ১৫ টন চাল উপ বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাত স্বাক্ষরিত ওই বরাদ্দকৃত চালের কোন হদিস মেলেনি এখনো।

টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আব্দুল আলীম বলেন, বরাদ্দকৃত ১৫ টন চাল সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আমাকে কিছু বলেনি।

এ ব্যাপারে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাড়া মেলেনি।

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়ার বারবাকিয়া হোসনে আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জব্দকৃত চাল ওই স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য বরাদ্দ করা। মাঠ ভরাট করতে ১১৭.৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। ওই কাজের বিপরীতে বরাদ্দের চালের বেশিরভাগ ইতোমধ্যে উত্তোলন করা হয়। অবশিষ্ট ছিল ২৮ টন। এই চালের মধ্য থেকে ডিও নিয়ে ২৬ এপ্রিল ১৫ টন চাল উত্তোলন করে স্কুলে রাখা হয়।

এ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন শিলখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী। চাল গায়েবের সূত্র ধরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই দিন পুলিশ তাকে আটক করে থানা হাজতে নিয়ে যায়। চাল উত্তোলনের বৈধ কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ২৪ ঘণ্টা পর রোববার রাতে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বরাদ্দকৃত চালের সাথে লোপাট হওয়া চালের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সাবেক কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাস থাকাকালীন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা সাহাদাত ওই চালের উপ বরাদ্দ দেয়। চকরিয়া খাদ্যগুদাম থেকে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী স্বাক্ষরে গত ৯ এপ্রিল এসব চাল উত্তোলন করা হয়েছে। চাল বিতরণের কোনো মাস্টাররোল অদ্যবধি আমাদের কার্যালয়ে জমা হয়নি।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা সাহাদাত বলেন, চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সত্য। তবে চাল গায়েবের বিষয়টি আমি জানি না।

তিনি আরও বলেন, সরকারি চালগুলো ইউএনও হিসেবে নিয়ম মেনে বরাদ্দ করেছি কিনা, মূলতঃ সেটাই তার দেখার বিষয়।

ত্রাণের চাল গায়েবের বিষয়টি তদন্ত করতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার সোমবার সকাল থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পেকুয়ায় ছিলেন। তিনি ত্রাণের চাল গায়েবের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক জনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, টৈটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা যায় নি। চালের বিষয়ে তদন্ত চলছে। সত্যতা যাচাই করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!