পেকুয়ায় মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে তিন যুবককে ১৬ ঘণ্টা থানায় আটকে রেখে টাকা আদায় করেছে পুলিশ। পেকুয়া থানার ওসি জাকির হোসেন ভূঁইয়ার সহযোগিতায় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মকবুল হোসেন এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা হলেন পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব গোয়াখালী এলাকার নাছির উদ্দিনের ছেলে টমটম অটোরিকশার গ্যারেজ মালিক সাজ্জাদ হোসেন (২৪), বিলহাচুরা এলাকার ইউনুছের ছেলে বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজের শ্রমিক সাজন মিয়া (২৩) ও বাইম্যাখালী এলাকার জালাল আহমদের ছেলে মুদি দোকানদার আজিম উদ্দিন (২৩)।
ভুক্তভোগী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা তিন বন্ধু পেশাগত কাজ সেরে সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আমার দোকানে যাই। রাত আটটার দিকে আমার দোকান বন্ধ করে আমরা পার্শ্ববর্তী মইয়াদিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ কেন্দ্র এলাকায় অপর বন্ধু ওসমানের বাসায় রাতের খাবারের দাওয়াতে যাই। রাত ১০ টায় সেখান থেকে ফেরার পথে পেকুয়া থানার এসআই মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমাদের পথরোধ করেন। এ সময় পুলিশ আমাদের গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই বলে থানায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। পরে তিনি আমাদের পেশা জেনে এক লাখ টাকা দাবি করেন। নয়তো থানায় নিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন।
অপর ভুক্তভোগী সাজন মিয়া বলেন, আমি মগনামা বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজের শ্রমিক। দিনমজুরির টাকায় আমার সংসার চলে। পুলিশের এমন আচরণ এবং টাকা দাবিতে আমি খুবই ভেঙ্গে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা যার পকেটে যা আছে, সবমিলিয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেতে চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশ এক লাখ টাকা দাবি করে বসে। পরে আমরা তার দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আমাদেরকে থানায় নিয়ে যান। তিনি মাদকসেবনের অভিযোগ এনে বিভিন্ন গালমন্দও করেন। মাদকসেবন করেছি কিনা তা পরীক্ষা করবে বলে আমাদের পেকুয়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু আমাদের কোনো পরীক্ষা না করিয়ে আবার থানায় নিয়ে যান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী আজিম উদ্দিন বলেন, থানায় নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দায়ের করার হুমকি দিয়ে হাজতে আটকে রাখেন। পরে আমাদের পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে এসআই মকবুল হোসেনের কাছে ২১ হাজার টাকা দিয়ে আমাদের ছাড়িয়ে আনেন।
থানা হাজতে আটকে রেখে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে পেকুয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মকবুল হোসেন বলেন, সোমবার রাত্রিকালীন ডিউটিতে সন্দেহভাজন তিন যুবককে আটক করা হয়। থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পেকুয়া থানার ওসি জাকির হোসেন ভুঁইয়া বলেন, সন্দেহভাজন তিন যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মাত্র। তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা আদায় করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তারপরও আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউর ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।