পেঁয়াজের অস্থির বাজারে সক্রিয় খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের সিন্ডিকেট

রমজান মাসকে ঘিরে চট্টগ্রামে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম চার টাকা বেড়েছে। যদিও বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। দাম বাড়ার পিছনে একেক বিক্রেতা একেক কথা বলছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে পেঁয়াজের বাজার।’
অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘আমদানি ব্যয় ও ভাড়া বৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।’ তাদের দাবি, এবার রমজানে পেঁয়াজের দাম অসহনীয় পর্যায়ে যাবে না। এদিকে যথাযথ বাজার মনিটরিংয়ের দাবি তুলেছেন ক্রেতারা।

চার দিন আগে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩-১৬ টাকায়। তবে রোববার (২৮ এপ্রিল) খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকৃতি ও জাতভেদে কেজি প্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭ থকে ২০ টাকায়।

এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। চাক্তাই থেকে পাইকারি দরে এনে রিয়াজউদ্দিন বাজারে খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আনিসুর রহমান জানান, চাক্তাই থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ কম তাই দাম বাড়তি। তিন থেকে চার দিন আগে কেজি প্রতি ১৪ টাকা পাইকারি দরে কিনে ১৮ টাকা বিক্রি করেছি। আজ (২৮ এপ্রিল) ১৬ টাকায় কিনে ২০ টাকায় বিক্রি করছি।

চাক্তাই থেকে পাইকারি কিনে এনে খুচরায় বিক্রি করেন সৈয়দ হোসেন। চকবাজারের এই মুদি দোকানদার জানান, ‘চার দিন আগে পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল কেজি প্রতি ১৫ টাকা। আর এখন ১৮ টাকা।’

মোমিন রোডের এক মুদি দোকানদার জানান, বড় আকারের পেঁয়াজ কেজিতে চার টাকা বেড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে পেঁয়াজের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কাজ করছে। সেখানে সিন্ডিকেট ছাড়া কিছু নেই। রমজান মাসের বিক্রি দিয়ে তারা পুরো বছর চলবে। খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই কন্ট্রোল করতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

ফারুক আহমেদ নামের এক ক্রেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে সব পণ্যের দাম বাড়ছে। পেঁয়াজের দামও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের যথাযথভাবে তদারকি করা উচিত।’

চাক্তাইয়ের বাবু অ্যান্ড সন্সের ম্যানেজার মো. শফিউল আলম জানান, ভারতের নাসিক জাতের পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২০ টাকায়। ৩-৪ দিন আগে ছিল ১৬-১৭ টাকা। বেলডাঙ্গা ও খাসখালি জাতের পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৭ টাকা। ৩-৪ দিন আগে বিক্রি করেছিল ১৩ টাকায়। তিনি আরও বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজ নেই। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসে। সীমান্তে দাম বেড়েছে। তাই এখানেও দাম বেড়েছে।
তবে বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে বলে জানান শফিউল আলম।

দাম বাড়ার অন্য একটি কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সিন্ডিকেট করার কোনো সুযোগ নেই। তবে অন্যান্য দ্রব্যের তুলনায় পেঁয়াজের দাম একটু বেশি। গাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। আগে ২০ টন পেঁয়াজ আনতে গাড়ি ভাড়া লাগতো ৩০ হাজার টাকা। স্কেল বসানোর কারণে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আনতে হচ্ছে মাত্র ১৩ টন পেঁয়াজ। ফলে কেজি প্রতি ভাড়া বেড়েছে ২ টাকা চার আনা।

তবে অন্য কথা জানালেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আবুল কাশেম। চাকাইয়ের এই ব্যবসায়ী জানান, বাজার থেকে বেলডাঙ্গা জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়াতে অন্যান্য জাতের পিয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। দাম বেশি বাড়বেনা।

সারাবছরই বাজার তদারকির দাবি জানিয়ে ক্যাব (কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রমজান আসলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি। পণ্য হাতবদল করে দাম বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া চাহিদা বাড়লেও ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। যেভাবে বাজার তদারকি করার দরকার, প্রশাসন সেভাবে বাজার তদারকি করেনা। আমাদের দাবি, সারাবছর যেনো বাজার তদারকি অব্যাহত রাখে প্রশাসন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টাও আমরা তদারকি করবো।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!