‘পুলিশের প্রশ্রয়ে’ ফিরিঙ্গিবাজারে কোটি টাকার মদের হাট, র‌্যাবের অভিযানে ধরা ১২

চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের মদের হাট কোতোয়ালী থানা পুলিশের চোখ পড়ে না! কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছে, ওই মদের হাটের বেপারীদের সঙ্গে রয়েছে নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সখ্যতা। তাই মাসের পর মাস ওই স্থানে চলে না কোনো অভিযান। এমনকি ওই পুলিশ কর্মকর্তার ইশারায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের চোখও যায় না ওই মাদক-পাড়ায়! প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা চললেও পুলিশের দেখেও না দেখার ভান করার বিষয়টি ওই এলাকায় ‘ওপেন সিক্রেট’।

মাদকসেবী মাতলামি আর মাদক ব্যবসায়ীদের হাঁসফাসে অতিষ্ঠ ফিরিঙ্গিবাজারের স্থানীয়রা। ওই এলাকার রমরমা মাদকের আখড়া এতোদিন পুলিশের চোখ এড়িয়ে গেলেও এবার র‍্যাবের চোখ এড়ায়নি। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) এক অভিযানেই ২৪৫ লিটার মদ উদ্ধার করেছে র‍্যাব। গ্রেফতার করা হয় ১২ মদ ব্যবসায়ী ও সেবীকে।

মাদক ব্যবসার বিষয়ে জানতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ও চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের দুই কর্মকর্তার বক্তব্যেও রয়েছে অসংগতি।

একজন বলছেন সেখানে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের নাকি আটকও নাকি করা হয়েছে। অন্যজনের বক্তব্য, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হয়েছে। ‘অন্যান্য’ কাজের চাপ থাকায় নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘র‌্যাবের অভিযান চালানো হয়েছে সেটা শুনেছি। আমরাও ওই এলাকা থেকে প্রতিদিন আটক করেছি। আটকৃকদের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে।’

কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি থানায় যোগদান করার পর থেকে ফিশারীঘাট এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের একটি তালিকা তৈরি করেছি। মাদকদ্রব্য নিয়নন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপও করেছি। থানার অন্যান্য কাজের মধ্যে পড়ে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছি বিধায় ওইদিকে একটু কম নজর দেওয়া হয়েছে। তারপরও মাদকের বিরুদ্ধে থানার পক্ষ থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ আজকের (মঙ্গলবার) পর থেকে এ বিষয়ে নতুন জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পুলিশের এমন দ্বিমুখী বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে এই মাদক ব্যবসা নিয়ে পুলিশের মধ্যে চলছে লুকোচুরি।

এদিকে ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় সন্ধ্যার পরই মাদকাসক্তদের মাতলামিতে অতিষ্ঠ থাকে স্থানীয়রা। চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার নিকটেই এই মাদকের আখড়ার অবস্থান। স্থানীয়দের দাবি, প্রকাশ্যে এমন অপকর্ম চললেও নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের ওই জ্যোষ্ঠ কর্তার ভয়ে থানা পুলিশ যেন অসহায়!

স্থানীয়দের অভিযোগ, চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ফিশারীঘাট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মদ ব্যবসার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অথচ পুলিশ গিয়ে খুঁজে পান না এসব মদের কারবারীদের। প্রতিদিনের ওই এলাকায় ঝুপড়িতে বসে প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা হয়। চলে মাদক সেবনও।

অতীতে ফিশরীঘাটে মদ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই সময় একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারও করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ মাদক। সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে আবারও ওই এলাকায় মদ ব্যবসা বিস্তৃত হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত গভীর রাত পর্যন্ত চলে অবাধে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবীদের আখড়া। এতে ওই এলাকায় প্রতিদিন হাঁটাচলা ও বসবাস করতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারিরা।

অভিযোগ রয়েছে, ফিরিংগিবাজারের এক মাদকসম্রাটের সঙ্গে নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্তার বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। এখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের মূলহোতাদের অধিকাংশই সনাতন সম্প্রদায়ের হওয়ায় ওই পুলিশ কর্তার বিশেষ ইঙ্গিতের কারণে অভিযান চালাতে পারছে না খোদ পুলিশই। এমনকি নগর গোয়েন্দা পুলিশও ফিরিঙ্গিবাজারে মাদকের আস্তানা নিয়ে রয়েছে নিস্ক্রিয়।

মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রাতে ফিশারীঘাট এলাকায় টানা দুই ঘন্টা অভিযান চালিয়ে একজন মাদক ব্যবসায়ীসহ মোট ১২ জনকে আটক করে র‍্যাব। আটককৃতদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন মাদকসেবী। এ সময় ২৪৫ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। তবে আটকৃকদের নাম ও ঠিকানা জানা যায়নি।

বিষয়টি র‌্যাব-৭ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার আটক এসব বিষজন ও মদ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মুআ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!