পুলিশের কোটিপতি এসআই নওয়াব আলী জেলে গেলেন দুদকের মামলায়

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই মো. নওয়াব আলীকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালত।

বুধবার (১০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় পুলিশের এসআই মো. নওয়াব আলী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দশে দিয়েছেন।’

দুদক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে কনস্টেবল পদে যোগ দেওয়ার পর নামে-বেনামে নওয়াব আলী বিপুল সম্পত্তির মালিক হন। এ সম্পদের মালিকানা দিয়েছেন তার স্ত্রী গোলজার বেগমকে। দুদক বিষয়টি অবহিত হয়ে তার সম্পত্তির বিরবণ জমা চাইলে নওয়াব আলী যে বিবরণটি দাখিল করেন তাতে অসঙ্গতি পান দুদক কর্মকরতা।

দুদক জানতে পারে, চট্টগ্রাম শহরে ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক নওয়াব আলী। সীতাকুণ্ডে জমি আছে তার। রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়িও। অর্জন করেছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।

নওয়াব আলীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের কেকানিয়া এলাকায়। সেখানে ২০১৩ সালে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ জমির ওপর একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন নিজের নামে। স্ত্রী গোলজারের নামে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুরে ৩৫৪ শতক জমি, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকায় পার্কিংসহ ১ হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, একই এলাকায় ৪ শতক জমি রয়েছে। গোলজারের নামে একটি মাইক্রোবাসও রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা নওয়াব আলী ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী ও নিজ নামে ফ্ল্যাট, জমি ও গাড়ি কিনেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া স্ত্রীকে মৎস্য চাষী দেখিয়েছেন সম্পদ বিবরণীতে। কিন্তু বাস্তবে মাছ চাষের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

দুদকে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণীতে গোলজার দাবি করেন, তিনি মিরসরাইয়ের পশ্চিম ইছাখালীর মদ্দারহাটে হারেস আহমদ, আমিনুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, শওকত আকবরসহ সাতজনের সঙ্গে চুক্তি করে একটি জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু তদন্তে উঠে আসে, হারেস আহমদসহ যেসব ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি দেখানো হয়েছে, তাঁরা ২০ বছর আগে মারা গেছেন।

এদিকে নওয়াব আলী মাছ চাষের চাষ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন বলে কাগজপত্রে দেখালেও বাস্তবে মাছ চাষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারপরও মাছ চাষ করা হয় মর্মে কর কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এসআই নওয়াব আলী, তাঁর স্ত্রী গোলজার বেগম, কর অঞ্চল-১ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) বাহার উদ্দিন চৌধুরী ও কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষকে আসামি করে আদালতে দুদক অভিযোগপত্র দিয়েছে।

আইনজীবী মাহমুদুল হক আরো জানান, এ মামলায় দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গোলজার বেগম, তাঁর স্বামী এসআই নওয়াব আলীসহ চার আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আইএমই/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!