পিয়ন থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি, গড়েছেন সম্পদের পাহাড়

পিয়ন পদে কোরবান আলী চাকরি করেন কুসুমপুরা ইউনিয়ন কাজী অফিসে। এ পদে যোগ দেওয়ার সময় তিনি ছিলেন ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য। ছাত্রদলের রাজনীতি করেও হয়ে যান পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কোরবান আলী।

বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) ‘দলে অনুপ্রবেশ করে ক্ষমতা অপব্যবহার করে অপ্রত্যাশিত অর্থ ও সম্পদের মালিক হওয়া’ শিরোনামে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে করা এক অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ৬ নম্বর কুসুমপুর ইউনিয়নের কাজী অফিসে চাকরি নেন কোরবান আলী। পরে ২০১৪ সালের দিকে তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় তার রয়েছে মাহিয়া বাণিজ্যলয় নামে একটি আড়তের দোকান। যার বাজারমূল্য ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। আইস ফ্যাক্টরি রোডে রেলওয়ে শাহ আমানত সুপার মার্কেটে তার রয়েছে শাহেদ কফি হাউজ ও শাহ আমানত ব্যাটারি নামের আরও দুটি দোকান। যেগুলোর মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া কাশেম এন্টারপ্রাইজের নামে তার রয়েছে গ্রাম রেজিস্ট্রেশনের চারটি অটোরিক্সা।

পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের এই সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে সরকারি খাসজমি দখল করাসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগও রয়েছে।

ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি থাকাকালীন তিনি কিশোর গ্যাং নামক একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। এর সদস্যদের মাধ্যমে এলাকায় নানা ধরনের অপকর্ম, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ দখল বাণিজ্য করতেন কোরবান আলী— পাওয়া গেছে এমন অভিযোগও।

অভিযোগে জানা গেছে, পশ্চিম পটিয়ার পুলিশের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী নেজাম মেম্বারের সঙ্গে রয়েছে কোরবান আলীর বিশেষ সম্পর্ক। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরে রোহিঙ্গা নাগরিকসহ ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন নেজাম মেম্বার।

অভিযোগ রয়েছে, দুই মাস আগে মনসা গ্রামের নাছির নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গা বিক্রি চাইলে তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন কোরবান আলী ও পটিয়ার বাদামতলের সবুজ মেম্বার। তারা কৌশলে তার কাছ থেকে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। পরে স্থানীয় সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর সহযোগিতায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রেহাই পান ভুক্তভোগী নাছির।

ভুক্তভোগী নাছির এ সম্পর্কে বলেন, ‌‘আমার একটি জমি বিক্রি করতে গেলে কোরবান আলী ও সবুজ মেম্বার জমির বিক্রির টাকা থেকে ২০ পার্সেন্ট কমিশন দাবি করেন। কৌশলে তাদেরকে আমি ম্যানেজও করে দেবো বলে জানাই। কিন্তু জায়গাটি বিক্রি করার পর আমি আর চাঁদা দিতে অস্বীকার করি। হঠাৎ একদিন আমার সঙ্গে কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে তারা আমার কাছ থেকে জোর করে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। পরে এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় তাদের কাছ স্ট্যাম্প উদ্ধার করি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালের দিকে কোরবান আলী ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করার দিন পটিয়ার শান্তিরহাট এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন কোরবান আলী। ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি প্রার্থী শাহাজাহান জুয়েলের নির্বাচনীয় প্রচারণায় ছাত্রদলের মিছিলসহ জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ওই জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

এ বিষয়ে কোরবান আলী বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা দেশের বাইরে থাকেন। এ কারণে ঘরের কর্তা আমি। আমার যেসব সম্পদের কথা বলা হচ্ছে, এগুলো আমার ভাইদের টাকা দিয়ে কেনা। ওখানে আমার নামও নেই। আমার নিজের কোনো টাকাও ছিল না।’

কিশোর গ্যাং ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। আমার সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সখ্যতা থাকতে পারে। এটা তো আর কিশোর গ্যাং বলা যায় না। আমি কখনও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’

মুআ/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!