পিটিয়ে স্বীকারোক্তি নিয়ে চকবাজারের পুলিশ মধ্যরাতে লোক ছাড়ল ৭ হাজারে

চট্টগ্রামের চকবাজার থানার পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাইন উদ্দিন। সম্প্রতি এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করার পর তার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি নিয়ে কৌশলে তিন ব্যক্তির নাম বলান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এই নামের মধ্যে একজন ছিলেন শহিদুল ইসলাম সুজন। পরে সাদা পোশাকে গিয়ে সুজনকে বাসার সামনে থেকে ধরে নিয়ে আসা হয় থানায়। পরবর্তীতে থানার ভেতরে এসআই কাউছারের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় সুজনকে।

সেখানে এক ব্যক্তির মুখ থেকে মাইন উদ্দিনের শিখিয়ে দেওয়া একটি ভিডিও দেখিয়ে সুজনকে সেখানকার এসআই কাউছার বলছেন, ‘তোমার নামসহ তিনজনের নাম বলছে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী।’

এরপর কথিত এই ভিডিওর কথাগুলো মিথ্যা দাবি করেন সুজন। পুলিশের কথার কাউন্টার প্রতিবাদ করলে দেয়া হয় মামলা দেয়ার হুমকি। এরপর মামলা থেকে বাঁচলে সুজনের কাছ থেকে দাবি করেন ৩০ হাজার টাকা।

পরে বাধ্য হয়ে সাত হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে স্থানীয় ডিশ ব্যবসায়ী জাবেদের জিম্মায় ওইদিন রাতেই তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

গত ১৩ সেপ্টেম্ব চকবাজার থানার পুলিশের এএসআই মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে সিএমপি কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম সুজন।

শহিদুল ইসলাম সুজন চকবাজার থানার ডিসি রোডের চাঁদমিয়া মুন্সি লেইনের বাসিন্দা। তিনি বহদ্দারহাট চান্দগাঁও বাহির সিগনাল এলাকায় টিকে গ্রুপের কর্মচারী হিসেবে গত দেড় বছর ধরে কাজ করছেন।

অভিযোগে বলা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১১টা ৪০ মিনিট। প্রতিদিনের মতো বাসায় ফিরছিলেন সুজন। ওই গলির মুখে পৌঁছালে পেছন থেকে এসে হঠাৎ তার কোমর ধরে ফেলেন এএসআই মাইন উদ্দিন। এরপর একটি ঘুষি মেরে দেন মাইন উদ্দিন। তখন সুজন আর কোনো কথা বলেনি।

তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হন ৫৫ বছর বয়সী তার বাবা। ছেলের কি হয়েছে, তাকে ধরছেন কেন- এমন কথা জিজ্ঞাসা করতে মাইন উদ্দিন বলেন, ‘কুত্তার বাচ্চা তোরে কি জবাব দিতে হবে? তোর পুতরে চৌদ্দ শিকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেব, মাদার….।’

আরও জানা যায়, এ সময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে সুজনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে মাঈন উদ্দিন সুজনকে বলেন, ‘কালাম নামে একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী ধরেছি। সে বলেছে, তোমার কাছ থেকে সে মাদক সংগ্রহ করেছে।’

সুজন বলেন, ‘এটা বলার পর আমার সামনে একটি জনৈক কালামের দেওয়া তথ্যের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখালো এএসআই মাঈন উদ্দিন। সেখানে দেখতে পাচ্ছি, ওই কালামকে মাইন উদ্দিন শিখিয়ে দিচ্ছে সুজন, মহিউদ্দিন ও জাবেদ প্রকাশ প্যাকেজ জাবেদের কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করা হয়েছে।’

‘তখন মাইন উদ্দিনকে আমি বললাম, ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে আমাকে লকারে তার সামনে নিয়ে যান। আমি সামনাসামনি জিজ্ঞেস করবো আমার সঙ্গে কালামের কোনো সখ্যতা কিংবা মোবাইলে যোগাযোগ আছে কি-না’— জানান সুজন।

সুজন বলেন, ‘তখন আমাকে তার সামনে হাজির না করে এএসআই বলল, তোমাদের তিনজনকে পলাতক আসামি দিয়েছি। তবে তোমার নাম বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আসো। তখন আমি এএসআইকে বললাম, আমি সামান্য চাকরি করি, আমার বাবা সবজি বিক্রি করে। এতো টাকা কোথায় পাব।’

এরপর মাইন উদ্দিন বলে উঠেন, ‘মাদারচোদ আমি জানি না, ভিতরে ভরে দিমু কিন্তু’। পরে বাধ্য হয়ে সাত হাজার টাকা দেয়ার কথা বললে স্থানীয় ডিশ ব্যবসায়ী জাবেদ ভাইয়ের সহযোগিতায় আমাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়। বাকি ১০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় নিই। পরবর্তীতে একই কায়দায় বাকি দুইজন মহিউদ্দিন ও জাবেদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন এএসআই।’

শহিদুল ইসলাম সুজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ওই এএসআই সাদা পোশাকে আমার এলাকার আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাই। এই পুলিশ কর্মকর্তার অনাকাঙ্ক্ষিত এমন কর্মকান্ডে আতঙ্কে বসবাস করছে।’

সুজনের মতোই একই কায়দায় কথিত মাদক মামলার পলাতক আসামি থেকে বাদ পেতে ডিশ ব্যবসায়ী জাবেদের মাধ্যমে পুলিশের এএসআই মাইন উদ্দিনকে চার হাজার টাকা দিয়েছেন মহিউদ্দিনও।

মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘টাকা না দিলে সুজনের মতো আমাকেও ধরে নিয়ে যাবে এই ভয়ে আমি টাকা দিয়েছি।’

পুলিশকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানায় মধ্যস্থতাকারী জাবেদও। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাত হাজার টাকা নয়, ছয় হাজার টাকা দিয়েছি। মিথ্যা বলব কেন। যেটা সত্য সেটা সব সময় বলব।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই মাইন উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযোগের কথা সত্য না। আমার নামে মিথ্যা বলা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের মজুমদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই। বিষয়টি আমি দেখছি।’

এমএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!