পাহাড়ে কৃষকের বাতিঘর রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র

পার্বত্য চট্টগ্রাম কৃষিনির্ভর অঞ্চল হিসেবে বেশ পরিচিত। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এই অঞ্চলে এখনো তেমন কোনো শিল্প কারখানা গড়ে না উঠায় ভৌগোলিক দিক বিবেচনা করে পাহাড়ের মানুষ কৃষি উপর নির্ভরশীল। এ লক্ষ্যে পাহাড়ি এই অঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে ১৯৭৬ সালে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে প্রায় ১০০ একর জমিতে গড়ে উঠে রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। গত ৪৩ বছরে ১৮টি উদ্যানতাত্ত্বিক বিভিন্ন ফল ও সবজির উন্নতজাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলের কৃষকের বাতিঘর হিসেবে কাজ করছে।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত ফল ও সবজি শুধু এ অঞ্চলেই নয়; দেশের কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তিন জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ৬৫ জন কর্মকর্তা-শ্রমিক নিয়ে এগিয়ে চলা এ গবেষণা কেন্দ্রে গত তিন বছরে নতুন আরও তিনটি ফলের উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। শুধুমাত্র জাত উদ্ভাবনই নয়, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমে পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাত ব্যবহার করে কৃষকও পাচ্ছেন সুফল।

রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত নয়টি সবজির জাত হলো, বারি ঝারশিম-২, বারি ঝাড়শিম-৩ (খাইস্যা), বারি জ্যাকবিন-১, বারি সীতা লাউ-১, বারি ব্রোকলি-১, বারি চিনাল-১, বারি সীম-৯, বারি সীম-১০ এবং বারি সীম-৪। নয়টি ফলের জাতহলো- বারি কলা-৩, বারি কলা-৪, বারি কামরাঙ্গা-২, রাবি আম-৮, বারি মিষ্টিলেবু-১, বারি কুল-৪ (বরই), বারি ড্রাগন ফল-১, বারি জলপাই-১ এবং বারি পেয়ারা-৪ জাত।

রাইখালী এলাকার বাসিন্দা সুভাশ চাকমা জানান, ‘আমি বারি-৪ আম জাতের বাগান করেছি। এ বছর ভালই ফলন পেয়েছি। দামও পেয়েছি ভালো। দাম ভালো পাওয়ার একমাত্র কারণ রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে আমে ব্যাগিং পদ্ধতি আমাদের হাতে কলমের মাধ্যমে শিখিয়েছে। যার ফলে আম দেখতে ভালো হওয়ায় দামও ভালো পেয়েছি।

পাহাড়ে কৃষকের বাতিঘর রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র 1
জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, ‘রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১০০টি বারি-৪ কমলার চারা রোপণ করি। গত বছর থেকে ফল আসা শুরু করেছে। খাওয়া দাওয়া, আত্মীয় স্বজনকে দেওয়ার পরও আমি ৩০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। এই বাগানে পরিচর্যা ও বার্ষিক ব্যয় হয় ১০-১৫ হাজার টাকার মতো। আনন্দ বিকাশ আরো জানান, রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে থেকে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে কখন কী ঔষুধ দিতে হবে এবং কিভাবে গাছের পরিচর্যা করতে হয়। সেই বিষয়ে তারা খোঁজখবর রাখেন, সঙ্গে সঙ্গে সহযোগীতাও করে থাকেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলার উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, ‘রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে তারা নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ করে। আমরা প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত জাতগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো কাজটি করে থাকি। তাদের উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে বারী আম-৮, বারী আম-১১, বারী আম-৪ বর্তমানে মাঠে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।’

রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ের কৃষির উন্নয়নে রাইখালী কৃষি গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে আটারোটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার মধ্যে নয়টি ফলের জাত, নয়টি সবজির জাত। গত তিন বছরে তিনটি ফলের জাত উদ্ভাবনসহ এ বছর আরও দুটি জাত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!