চাঁদাবাজি থেকে স্বেচ্ছাচারিতা/ পাহাড়তলীর আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ!

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়ছার মালিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে জানিয়ে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর শনিবার (১৩ জুলাই) অভিযোগ দিয়েছেন পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলের ২৮ জন নেতা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, কায়ছার মালিক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর বরাবরই আত্মকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার পাশাপাশি নানা ধরনের অনৈতিক কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচি পালনের কথা বলে নিরব চাঁদাবাজি করে আদায়কৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন লোকজন এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ধার হিসেবে টাকা নিয়ে আর ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, দলীয় কর্মসূচির নামে ওয়ার্ড কমিটির সদস্য মমিনুল হক থেকে চাঁদা আদায় করেছেন। চাঁদা দাবি করেছেন দন্ত চিকিৎসক স্বপন দাসের কাছেও।

জানা যায়, কায়ছার মালিক রিক্সা ও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি নেপথ্যে থেকে জুয়ার বোর্ড পরিচালনা, বিভিন্ন অনৈতিক ও সংগঠনবিরোধী কাজের সাথে যুক্ত থেকে অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনে লিপ্ত থেকে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে চলেছেন। কায়ছার মালিকের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার ওই ওয়ার্ডের জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। নিজে পকেটে পুরেছেন মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে পাওয়া অর্থও।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেন, রেলওয়েসহ সকল সরকারি নিয়োগে সরকার বিরোধী লোকজনকে সাংসদ থেকে ডিও লেটার পাইয়ে দিয়েছেন কায়ছার মালিক। দলীয় প্যাডে নেতাদের স্বাক্ষর জাল করে ডিও লেটার দিয়ে সরকারবিরোধী লোকজনকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছেন।

জানা যায়, কায়ছার মালিক দলীয় প্রভাব বিস্তার করে আমবাগান কাউন্সিলর অফিস সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটি পুকুর মৎস্য চাষের আওতায় ব্যক্তি স্বার্থে নিজ নামে লিজ নেন। পরে স্থানীয় সাংসদকে দিয়ে রেল প্রশাসনকে চাপ দিয়ে ওই পুকরের দুই পাড়ে গত ৩০-৪০ বছর ধরে বসবাসরত ২০-৩০টি ছিন্নমূল পরিবারকে উচ্ছেদ করেন। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকেল্পর আওতায় চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্যের দেওয়া ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকাও আত্মসাৎ করেছেন কায়ছার মালিক—অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর করা অভিযোগপত্রে ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ‘কায়ছার মালিকের এ রকম অনৈতিক কর্মকান্ড এবং দলীয় নেতাকর্মীদেরকে বাদ দিয়ে চিহ্নিত হত্যামামলার আসামি ও ভূমিদস্যু খ্যাত কালা নাছির গংদের সাথে চলাফেরার কারণে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ প্রায় দ্বিগুণ সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় কায়ছার মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কায়ছার মালিক। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুধু আমার সংগঠন নয়, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কোন সংগঠনই দেখাতে পারবে না। আমার রাজনৈতিক জীবনে আামি কখনো এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত বা লিপ্ত ছিলাম না। এলাকার সকল মানুষ এটা ভালোভাবে জানে। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শ ও সকল নিয়মকানুন মেনে রাজনীতি করে আসছি।’

কায়ছার মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন রোববার (১৪ জুলাই) রাতে মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের পরবর্তী সভায় তুলবো। কমিটি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁঞাকে সভাপতি ও কায়ছার মালিককে সাধারণ সম্পাদক করে এই ওয়ার্ডের জন্য ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট তিন বছর মেয়াদী কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ২৪ জুলাই এই কমিটির ছয় বছর পূর্ণ হবে।

এমএ/

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!