পাহাড়তলীতে চুরির পরপরই ডেমু ট্রেন চালু নিয়ে বিস্ময়, রিলে এল কোত্থেকে— উঠেছে প্রশ্ন

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর লোকোশেডে রেলওয়ের ডেমু ট্রেনের রিলে চুরির ঘটনার পর ওইদিন বিকালেই চালু করা হয় ট্রেনটি। অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে রিলে লাগিয়ে ট্রেনটি চালু করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় ডেমু ট্রেনের ১৭টি রিলে চুরির ঘটনা ঘটে। তবে চুরির ঘটনার পর ওইদিন বিকাল ৪টার মধ্যে আবার রিলে লাগিয়ে চালু করা হয় ডেমু ট্রেনটি। এসব রিলে কুমিল্লার লাকসাম থেকে আনা হয়েছে বলে জানান সিনিয়র সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (এসএসএই) নজরুল ইসলাম।

হঠাৎ কিভাবে ডেমু ট্রেন সচল হলো জানতে চাইলে এসএসএই নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, লাকসাম স্টেশনে আন্ডার রিপেয়ার ডেমু থেকে রিলে এনে সংযোজন করা হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুমিল্লার লাকসাম থেকে আন্ডার রিপেয়ার ডেমুর রিলে অর্ডার দিয়ে চট্টগ্রামে আনা এবং প্রতিটি রিলে লাগানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এত অল্প সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই রিলে অর্ডার দিয়ে আনা এবং লাগানো সম্ভব নয়। তাছাড়া অন্য ডেমু থেকে যন্ত্রাংশ চেয়ে অর্ডারের কথা বললেও যিনি এই অর্ডার দেবেন সেই বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। অথচ এই কর্মকর্তার অধীনেই কাজ করেন নজরুল ইসলাম।

নজরুল ইসলাম ৪ বছর ধরে এই পদে কর্মরত আছেন। গত ২০ ফ্রেব্রুয়ারি ডেমু লোকোশেডে রাত সাড়ে ১০টায় প্রবেশ করেন নজরুল। পরদিন ভোর ৬টায় ডেমু ট্রেনের ১৭টি রিলে চুরির ঘটনা ঘটে। সকাল ৮টায় তিনি চুরির বিষয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে জানান। কিন্তু এই রিলে মজুদ না থাকার পরও ওইদিন বিকাল ৪টায় রিলেবিহীন ডেমু ট্রেনটি সচল হয়ে যায়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ ফ্রেব্রুয়ারি) রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে দুজনকে আসামি করে মামলা করেন।

ডেমু ট্রেন সচলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) ওয়াহিদুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ডেমু ট্রেনের দুটো ইঞ্জিন। একটি হঠাৎ অচল হলে অন্যটি দিয়ে টেনে নেওয়া যায়— এটাই ডেমু ট্রেনের সুবিধা।

তবে লাকসাম থেকে রিলে এনে সচল করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমাকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। হয়তো লাকসামের ফোরম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিলে আনা হয়েছে।

তবে রিলে আনলেও তা এত অল্প সময়ের মধ্যে লাগিয়ে ফেলার কথা না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যান্ত্রিক প্রকৌশলী বলেন, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলীর (পূর্ব) অধীনে আছেন নজরুল ইসলাম। তাকে না জানিয়ে অন্য ডেমুর কোনো যন্ত্রাংশ আনা সম্ভব নয়। একইসঙ্গে অল্প সময়ে ডেমুর রিলে লাগিয়ে সচল করাও অসম্ভব।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) বোরহান উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে রয়েছেন বলে জানান।

অভিযোগ আছে, রেলওয়ের কিছু অসৎ কর্মকর্তা ফায়দা লুটতে বিভিন্ন সময় মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির নাটক সাজায়। এর ফলে দেশের বাইরে থেকে সেই যন্ত্রাংশ আবারো ক্রয়ের দরপত্র দিলে তা সহজেই বাগিয়ে নেয় ঠিকাদারি সিন্ডিকেট।

জেএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!