পার্বত্য চট্টগ্রামে গ্যাস খুঁজবে বড় বিদেশি কোম্পানি, সংকট কাটাতে সরকার মরিয়া

বিপুল গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে জরিপের তথ্য

গ্যাসের খোঁজে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুসন্ধান কূপ খনন করার পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স। দেশে গ্যাস সংকট কাটিয়ে উঠতে আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় উত্স থেকে সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

সম্প্রতি পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুসারে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেল গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকায় এখন এই এলাকায় গ্যাসের অনুসন্ধানে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি শরীয়তপুরে শিগগিরই অনুসন্ধান কূপ খনন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। ইতিমধ্যে তিনটি কোম্পানি এ জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়েল পার্বত্য চট্টগ্রামের ২২এ এবং ২২বি ব্লকে অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং উৎপাদনে বাপেক্সের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া ভোলা গ্যাসক্ষেত্রেও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি। এর আগেও এরিয়েল বাংলাদেশে কূপ খনন কাজ করেছে। তাদের একটি ড্রিলিং রিগ (কূপ খনন যন্ত্র) বাংলাদেশে রয়েছে।

জানা গেছে, গ্যাসের অনুসন্ধান-উৎপাদন বাড়াতে বাপেক্স অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুটি ব্লকে গভীর কূপ খননের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। এছাড়া শরীয়তপুরেও একটি কূপ খননের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। এর বাইরে ভোলায় আরও কূপ খনন করা হবে।

স্থানীয় উৎপাদন কমে আসায় গ্যাস সংকটের কারণে বিভিন্ন সময় বন্ধ রাখতে হয়েছে সারকারখানা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ৬ ঘণ্টা করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতে সম্প্রতি দৈনিক ৪ ঘণ্টা গ্যাস ব্যবহার না করতে শিল্প-কারখানাগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে কয়েক বছর আগে থেকে গ্যাস আমদানি শুরু হলেও সংকটের তীব্রতায় এখন রেশনিং করতে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যটির মূল্যের অস্থিতিশীলতায় এ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা সহসাই কাটছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) তথ্য বলছে, বর্তমানে যে হারে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির অভ্যন্তরীণ মজুদ ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসবে। গত অর্থবছরেও (২০২০-২১) দেশে দৈনিক চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় সরবরাহের ঘাটতি ছিল ১৮৮ কোটি ঘনফুট। ২০২৫ সাল নাগাদ তা বেড়ে ৩৯০ কোটি ঘনফুট হবে। ২০৩০ সালে এ ঘাটতি আরো বেড়ে দাঁড়াবে ৫৫৮ কোটি ঘনফুটে।

অন্যদিকে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পাশাপাশি স্থানীয় মজুদ ফুরিয়ে আসছে দ্রুতই। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হওয়ায় ও আমদানি সরবরাহ না বাড়ায় জ্বালানি পণ্যটি নিয়ে এরই মধ্যে শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!