পানিতে ভাসছে চকরিয়া, পানি ও খাবার খুঁজছে মানুষ

টানা বর্ষণে নেমেছে পাহাড়ি ঢল, সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। পানিতে ভাসছে কক্সবাজারের চকরিয়া। চরম দূর্ভোগে পড়েছে বানবাসী মানুষ। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এই পানি আরও বাড়বে বলে আশংকা করছে স্থানীয়রা।

এই মুহুর্তে চকরিয়া পৌরসভাসহ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে অন্তত ৩০ হাজারের বেশী বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামীন সড়কগুলো পানির নিচে থাকায় যান চলাচল রয়েছে বন্ধ। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শুকনো ও রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব অপ্রতুল।

উপজেলার জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়ক, চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়ক, কেবি জালাল উদ্দিন সড়কসহ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের উপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গ্রামীন সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আঞ্চলিক সড়কে ঝুঁকি নিয়ে অল্প সংখ্যক গণপরিবহণ চলছে। চকরিয়া পৌরসভার প্রায ৯টি ওয়ার্ডে পানিবন্দী রয়েছে কয়েকশত পরিবার।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে আছে। বিএমচর ইউনিয়নের কইন্যাকুম বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের উপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় পাড়া-গাঁয়ে প্রবেশ করছে পানি।

এছাড়া, চকরিয়া পৌরসভা, উপজেলার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁশিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী ও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের নিচু গ্রামগুলোতেই অতিরিক্ত পানি উঠেছে।

বাটাখালী ব্রীজ থেকে থানার মোড় হয়ে মগবাজার পর্যন্ত ঢলের পানিতে তলিয়ে আছে। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দিগরপানখালী এলাকার বেড়িবাঁধে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। স্থানীয়দের আশংকা, নদীর পানি না কমলে যেকোন মুহুর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে শহর রক্ষা বাঁধটি।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও মাতামুহুরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শত শত বসতঘর পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এতে হাজারো মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে। তাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।’

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, ‘মাতামুহুরীর নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ইউনিয়নের ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যাকবলিত লোকজন চরম দূর্ভোগে পড়েছে।’

কাকারা ইউনিয়নের এসএমচের বাসিন্দা ও চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে শতাধিক বসতঘর। পানিতে তলিয়ে রয়েছে অধিকাংশ টিউবওয়েল। যার কারণে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রান্না করা খাবারেরও সংকট রয়েছে। আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো খাবার সরবরাহের দাবি জানাচ্ছি।’

চিরিংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমার এলাকায় মৎস্য ঘের বেশি। এই বন্যার কারণে মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানির কারণে মৎস্য ঘেরের মাছ মারা পড়ছে।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেছেন, ‘চকরিয়ার বন্যাকবলিত বেশ কয়েকটি এলাকা আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। বন্যাকবলিত পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে সাহায্যের জন্য ৭২ টন চাল এবং ১০০ বস্তা শুকনো খাবার জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ৪ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাতে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষরা দ্রুত এই সাহায্য পায়।’

এদিকে চকরিয়া পৌরসভার মেযর আলমগীর চৌধুরী বলেন, পুরো পৌলশহরে বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে এসব বন্যা কবলিত মানুষ। বন্যার পানি যাতে দ্রুত নিচের দিকে নেমে যায় সেজন্য ড্রেনগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত মানুষজন যাতে খাদ্য কষ্টে না পড়ে সেজন্য ১০ হাজার মানুষের জন্য রান্না করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই এসব খাবার বিতরণ করা হবে।’

কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভানে শুকনো ও রান্না করা খাবার বন্যাকবলিত মানুষের ঘরে ঘরে পাঠাচ্ছি। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!