পাথরঘাটার বিস্ফোরণে দায়ী কর্ণফুলী গ্যাস ও বাড়ির মালিক, তদন্ত প্রতিবেদন (ভিডিওসহ)

চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের সাতজনের প্রাণহানির ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস রাইজার থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে বাড়ির মালিক নিয়ম ভেঙে সীমানা দেওয়ালের ভেতর গ্যাস রাইজারটি ঢেকে না রেখে উন্মুক্ত রাখলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো বলেও মতামত এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। মোট ১৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিকে হটলাইন সেবা চালুসহ ৫টি সুপারিশও করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে (২৪ নভেম্বর) জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এজেএম শরীফ হোসেন জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনকে এই প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কমিটির প্রধান এডিএম শরীফ হোসেনসহ সদস্যরা সাংবাদিকদের ব্রিফ্রিং করেন। এর আগে গত ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রতিদিন অনলাইন সংস্করণে ‘গ্যাস লিকেজ থেকেই পাথরঘাটার বিস্ফোরণ‘ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে।

প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস রাইজার পরবর্তী জিআই অংশ থেকে রান্নার জন্য প্রাকৃতিক মিথেন গ্যাস বন্ধ শূন্যস্থানে বিপুল পরিমাণে জমা হয়ে ২ নম্বর কক্ষে প্রথমে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে সকালের পূজার জন্য জ্বালানো ম্যাচের কাঠি থেকে এই ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়েছে। যা মুহূর্তেই ঘরের রাস্তার পাশের দেয়াল ও পূর্ব পাশের দেয়াল উড়িয়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে।’

আরও বলা হয়, ‘বাড়ির মালিক কর্তৃক রাস্তার পাশের ঘরের সামনের অংশ (কর্নিশ) সীমানা দেওয়াল পর্যন্ত বৃদ্ধি না করলে গ্যাস কোম্পানি কর্তৃক গ্যাস রাইজারটি উন্মুক্ত স্থানেই থাকতো। কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট শূন্য স্থানে আটকা পড়তো না। গ্যাস রাইজারটি মুক্তভাবে খোলা স্থানে থাকলে ত্রুটিপূর্ণ রাইজার পরবর্তী অংশ থেকে নিঃসৃত গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেত। অভ্যন্তরীণ গ্যাস লাইনের ত্রুটি এবং বাড়ির মালিক কর্তৃক সৃষ্ট কৃত্রিম শূন্যস্থানে জমে থাকা গ্যাস এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।’

এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসনের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি পাঁচটি সুপারিশও করেছে। তা হলো ভবন মালিক কর্তৃক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত আইন ও বিধিমালা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সিডিএসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন লিফলেট, ব্যানার, টিভিসি ইত্যাদিও মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সিডিএ অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে যেসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সে ভবনসমূহ দ্রুত পরিদর্শন করে বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন অঞ্চলের গ্যাস লাইনের রাইজারসমূহ পরীক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত বিরতিতে গ্যাসের লাইন পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষার পর ‘গ্যাসের লাইনটি পরীক্ষিত’ এই ধরনের একটি সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

গ্যাসলাইন থেকে গ্যাস নিঃসরণ চিহ্নিতকরণ এবং সর্তকতা অবলম্বনের জন্য জনগণের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। বিভিন্ন লিফলেট, ব্যানার, টিভিসি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!