পাঠানটুলীর বাবুল খুনে নিখুঁত ছক, অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না

অস্ত্রসহ আটক জিয়াকে কেন ছেড়ে দিল ডিবি পুলিশ?

চট্টগ্রাম নগরীর পাঠানটুলীতে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীর মধ্যে সংঘর্ষে আজগর আলী বাবুল নামে একজন আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হওয়ার ৭২ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি হত্যায় কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এছাড়া ঘটনার পরই হত্যাকারীরা ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলার পাশাপাশি ডিভিআরও (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) নিয়ে যায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে এই হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত কিনা?

এর পাশাপাশি উঠেছে আরও কিছু প্রশ্ন, এখন পর্যন্ত যেসব প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থল থেকে জিয়া নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেছিল গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। তবে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো ২৬ জনের তালিকায় জিয়ার নাম নেই। জিয়া নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থনে সেখানে গিয়েছিলেন। জিয়া উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত অবস্থায় ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে স্নাতক পর্যায়ে কমার্স কলেজে ভর্তি হলে কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদে জিয়াকে আটকের সময় তার কাছ থেকে ডিবি সদস্যদের একটা ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করতে দেখা গেলেও সেদিন রাতেই জিয়াকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন আগে থেকেই মগপুকুর পাড়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদের। অন্যদিকে বাহাদুর প্রচারণা চালাচ্ছিলেন মতিয়ারপোলে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মগপুকুর পাড়ে আসেন বাহাদুর। সেখানে গিয়ে মোস্তফা কামাল টিপুর বাসায় অবস্থান নেন বাহাদুর। ঘন্টাখানেক সেখানে অবস্থান নেওয়ার পর বাহাদুরের আরও কিছু কর্মী-সমর্থক সেখানে এলে প্রচারণায় বের হন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এ সময় বাহাদুরের সমর্থকদের হাতে অস্ত্র এলো কোথা থেকে এবং অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পরও জিয়াকে কেন কার নির্দেশে ছেড়ে দিল পুলিশ?

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জিয়া নামে কাউকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি বলে মনে হয় না। ঘটনার দিন অনেককেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। পরে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ছেড়েও দিয়েছি।’

তবে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিএমপির উপ কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মনজুর মোর্শেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা তো ফুটেজ দেখে ধরিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যাদের সংশ্লিষ্ট মনে হয়নি তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফুটেজের কথা এবং অস্ত্র থাকার কথা আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। বিষয়টা সম্পর্কে খবর নিচ্ছি।’

এদিকে সিসিটিভি ফুটেজ ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এই কথা কে বলেছেন, আমি জানি না। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। সেগুলো পর্যালোচনা করছি।’

হামলায় কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনও আসেনি। আশা করছি ৩-৪ দিনের মধ্যেই এই বিষয়ে জানতে পারবো।’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাত আটটার দিকে নগরীর পাঠানটুলী মগপুকুর পাড় এলাকায় ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নামে একজন মারা যান। এছাড়া মাহবুব নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সংঘর্ষ শুরুর পর আবদুল কাদের ও তার কয়েকজন অনুসারী মগপুকুর পাড়ে তাহের ভবনের দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বাহাদুর ও তার সমর্থকরা ভবনটি ঘিরে কাদেরসহ তার অনুসারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে।

সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখান থেকে আবদুল কাদেরসহ ২৬ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পরদিন বুধবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে নিহত আজগর আলী বাবুলের ছেলে সিজান মোহাম্মদ সেতু বাদী হয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদেরকে মূল অভিযুক্ত করে মোট ১৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যামামলা দায়ের করে। এই মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আবেদনের প্রেক্ষিতে কাদের সহ ১১ জনকে ৩ দিনের রিমান্ড আদেশ দেন আদালত। তবে এখন পর্যন্ত এই মামলার দুজন আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!