পাগলা ঘোড়া/ ১৯ দিনে স্বর্ণের দাম বাড়ল তিন দফা

দফায় দফায় বাড়ছে স্বর্ণের দাম। সোমবার (১৯ আগস্ট) থেকে দেশের বাজারে আবারো বেড়েছে স্বর্ণের দাম। এ নিয়ে চলতি আগস্ট মাসের ১৯ দিনের মধ্যেই তৃতীয়বারের মতো দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লো। প্রতিবারই ভরিতে ১ হাজার টাকার অধিক দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার প্রতি ভরিতে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ১৬৬ টাকা। রোববার (১৮ আগস্ট) রাতে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ায় মূল্য সমন্বয়ের জন্য দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়েছে বলে বাজুসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এটা বাইরের খবর।

তবে ভেতরের খবর হলো উন্নত দেশগুলোতে স্বর্ণ ‘ব্লক’ করে রাখার কারণেই এর দাম বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট—যা জার্মানি থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্য এক সূত্র বলছে, ডলারের দাম কমলে স্বর্ণের দাম বাড়ে, আবার ডলারের দাম বাড়লে স্বর্ণের দাম কমে। বর্তমানে ডলারের দাম কমতির দিকে। এছাড়া তেলের দাম কমলে স্বর্ণের দাম বাড়ে৤ আবার তেলের দাম বাড়লে স্বর্ণের দাম কমে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরানি তেলের জাহাজ আটকে রাখার ঘটনা প্রভাব পড়েছে তেলের বাজারে। যার প্রভাবে বেড়ে যাচ্ছে স্বর্ণের দাম।

জানা যায়, সোমবার থেকেই বাড়তি দামে স্বর্ণ কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরি কিনতে হচ্ছে ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা দরে, যা রোববার বিদ্যমান দরের চেয়ে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বেশি। তবে স্বর্ণের দাম বাড়লেও কমছে রূপার দাম। প্রতি ভরি রূপার দাম কমেছে ২৩৪ টাকা। এটিও সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, দর বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার থেকে প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা, ২১ ক্যারেট ৫৪ হাজার ৫২৯ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ৪৯ হাজার ৫১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ২৯ হাজার ১৬০ টাকা। তবে রূপার দাম কমে ভরি হবে ৯৩৩ টাকা।

রোববার পর্যন্ত প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ৫৫ হাজার ৬৯৬ টাকা, ২১ ক্যারেট ৫৩ হাজার ৩৬৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৪৮ হাজার ৩৪৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ২৭ হাজার ৯৯৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ সোমবার থেকে ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়লো।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো যায় না। কেন্দ্র থেকে যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তা আমরা কার্যকর করি মাত্র। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম অনেক অনেক বেশি। প্রতিদিন আউন্স প্রতি স্বর্ণের দাম ৮০ ডলার, ১০০ ডলার করে বাড়ছে।’

নগরীর রাহাত্তারপুলের গৃহবধু তাহমিনা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্বর্ণ মেয়েদের অনেক পছন্দের জিনিস। দাম বাড়লে চাইলেই মেয়েরা স্বর্ণ পরতে পারে না। স্বর্ণের দাম বাড়লে সাধারণ নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি হয়। সাধারণ নারীদের অনেক ইচ্ছা থাকা সত্বেও দাম বাড়ার কারণে নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করতে পারে না।’

আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বেশি—এটা একটা অজুহাতমাত্র এমনটি মনে করেন অর্থনীতিবিদ মঈনুল হোসেন। স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণে অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়ে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির তেমন প্রভাব পড়বে না। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বেশি। এর সুযোগ নিচ্ছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম যতটা বেড়েছে, দেশে তার তুলনায় অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!