পাকিস্তানের ইতিহাস ও সেমির স্বপ্ন টিকিয়ে রাখলেন বাবর

অপেক্ষা বাড়লো নিউজিল্যান্ডের

পাকিস্তানের ইতিহাস ও সেমির স্বপ্ন দারুণভাবে টিকে রইলো। ঘোরতর আশাবাদী সমর্থকও হয়তো ভাবেনি, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের সঙ্গে এতোটা মিলে যাবে দেশটির এবারের বিশ্বকাপ যাত্রা। প্রথম সাত ম্যাচ শেষে হুবহু সে বিশ্বকাপের মতোই ফলাফল পেয়েছে পাকিস্তান। যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে দেশটির সমর্থকদের মনের আশা।

বুধবার বার্মিংহামের এজবাস্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিলো পাকিস্তানের জন্য অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াই। কারণ হারলেই শঙ্কায় পড়ে যাবে তাদের সেমিফাইনালের টিকিট। অন্যদিকে এ ম্যাচে জিতলেই অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ চারে পৌঁছে যেত কিউইরা।
পাকিস্তানের ইতিহাস ও সেমির স্বপ্ন টিকিয়ে রাখলেন বাবর 1
কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সে লক্ষ্য ছুঁতে দেয়নি পাকিস্তান। বাবর আজম ও হারিস সোহেলের ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়নরা। অপেক্ষা বাড়িয়েছে নিউজিল্যান্ডের, ফিরিয়ে এনেছে নিজেদের ২৭ বছর আগের ইতিহাস। কিউইদের করা ২৩৭ রানের সংগ্রহ ৪ উইকেট হারিয়ে তাড়া করেছে পাকিস্তান।

কাকতালীয় হলেও অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে হওয়া ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের প্রথম ছয় ম্যাচের ফলাফল ছিলো যথাক্রমে হার, জয়, পরিত্যক্ত, হার, হার ও জয়। এবারও প্রথম ছয় ম্যাচে ঠিক হার, জয়, পরিত্যক্ত, হার, হার ও জয় দেখেছে পাকিস্তান। সেবার প্রথম ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছিল ইমরান খানের দল, এবার সরফরাজ আহমেদের দলও ক্যারিবীয়দের কাছেই হেরেছে নিজেদের প্রথম ম্যাচ।

শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের সপ্তম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। সে ম্যাচে জয়লাভ করেই সেমির টিকিট নিশ্চিত করে তারা। এবারও নিজেদের সপ্তম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে নিজেদের সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখল দলটি।
পাকিস্তানের ইতিহাস ও সেমির স্বপ্ন টিকিয়ে রাখলেন বাবর 2
তবে সেবার অংশগ্রহণকারী দল ছিলো ৯টি, এবার হলো ১০টি। তাই পুরোপুরি ফিরে আসবে না ১৯৯২ সালের ইতিহাস। তবু এমন কাকতালীয় ফল পাওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে পাকিস্তান।

২৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। দুই ওপেনার ইমাম উল হক (১৯) ও ফাখর জামান (৯) সাজঘরে ফিরে যান দলীয় ৪৪ রানের মাথায়ই। তবে তৃতীয় উইকেটে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়েন বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ।

দুজন মিলে যোগ করেন ৬৬ রান। কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ভাঙেন এ জুটি। দলীয় ১১০ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৩২ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন হাফিজ। তবু স্বস্তি ফেরেনি কিউই শিবিরে। কারণ চতুর্থ উইকেটে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন হারিস সোহেল ও বাবর আজম।

এ ম্যাচ খেলতে নামার আগে বাবরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের রান ছিল ২৯৭১। তিনি আজ শুধু ক্যারিয়ারের ৩০০০ রানই পূরণ করেননি, খেলেছেন দশম সেঞ্চুরির ইনিংসও। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক হারিস সোহেল।

বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার সেঞ্চুরি না পেলেও, তুলে নিয়েছেন ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি। আর তাদের দুজনের ১২৬ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতেই মূলত সহজ জয় পেয়েছে পাকিস্তান। জয়ের জন্য মাত্র ২ রান বাকি থাকতে রানআউটে কাঁটা পড়েন ৭৬ বলে ৬৮ রান করা হারিস।

তবে শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন সেঞ্চুরিয়ার বাবর। তিনি অপরাজিত ছিলেন ১০১ রান করে।

এর আগে পাকিস্তানের বোলিং তোপে শুরুতে বিপদে পড়লেও জিমি নিশাম আর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের ব্যাটে চড়ে শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ২৩৭ রানের লড়াকু পুঁজি দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড।

এজবাস্টনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেই চাপের মুখে পড়ে কিউইরা। প্রথম ওভারে কিছুটা চমক ছিল। অফস্পিনার মোহাম্মদ হাফিজকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করে পাকিস্তান। তবে সেই ওভারটা বেশ দেখেশুনেই কাটিয়ে দেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও কলিন মুনরো।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে আসেন মোহাম্মদ আমির। প্রথম বলেই উইকেট। আমিরের অফসাইডের বলটি শরীরের বাইরে থেকে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্ট্যাম্পে টেনে আনেন গাপটিল, মাত্র ৫ রান করেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন কিউই ওপেনার।

শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া নিউজিল্যান্ড ধীর ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ করে। কিন্তু সপ্তম ওভারে এসে তারা হারিয়ে বসে আরেক ওপেনার মুনরোকেও। ১২ রান করে শাহীন আফ্রিদির দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি।
পাকিস্তানের ইতিহাস ও সেমির স্বপ্ন টিকিয়ে রাখলেন বাবর 3
নিজের পরের ওভারে আবারও আঘাত শাহীন আফ্রিদির। এবার তিনি পরাস্ত করেন কিউই ব্যাটিং স্তম্ভ রস টেলরকে (৩)। উইকেটের পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন সরফরাজ আহমেদ।

১৩তম ওভারে আরও এক উইকেট শাহীন আফ্রিদির। এবার তার দুর্দান্ত ডেলিভারিটি কিছু বোঝার আগেই টম লাথামের (১) ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় সরফরাজের হাতে। ৪৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে কিউইরা।

পঞ্চম উইকেটে চাপ কিছুটা সামলে উঠেন কেন উইলিয়ামসন আর জিমি নিশাম। ৩৭ রানের এই জুটি ভাঙেন শাদাব খান। তার ঘূর্ণিতে ৪১ রানের মাথায় উইকেটরক্ষক সরফরাজের ক্যাচ হন অধিনায়ক উইলিয়ামসন।

সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে নিশাম আর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের দুর্দান্ত প্রতিরোধ। তাদের ১৩২ রানের বড় জুটিতে ভর করেই লড়াকু পুঁজির ভিতটা পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
পাকিস্তানের ইতিহাস ও সেমির স্বপ্ন টিকিয়ে রাখলেন বাবর 4
৭১ বলে ৬৪ রান করে রানআউটের কবলে পড়েন ডি গ্র্যান্ডহোম। তবে নিশাম শেষ পর্যন্ত আউট হননি। যদিও একটুর জন্য সেঞ্চুরিটা পাননি। ১১২ বলে ৫ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন নিশাম।

পাকিস্তানের পক্ষে ২৮ রানে ৩টি উইকেট নেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। একটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ আমির আর শাদাব খান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!