পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে তেল যাবে ঢাকায়

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় দ্রুততম সময়ে তেল নিয়ে যাওয়ার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ ত্বরাণ্বিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাইপলাইনটি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গার গুপ্তখাল থেকে ঢাকার কাছে ফতুল্লা তেল ডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে তেল যাবে ঢাকায় 1

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন জ্বালানি তেল সরবরাহ টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। এজন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। যদিও কোভিড-১৯ বাস্তবায়ন গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম তদারকির জন্য ‘ওনার ইঞ্জিনিয়ার’ নিয়োগ করা গেলে আরও দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’

২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন পরিচালনা কার্যক্রম চট্টগ্রামের ডেসপ্যাচ টার্মিনালের স্ক্যাডা মাস্টার কন্ট্রোল স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। স্ক্যাডা, টেলিকমিউনিকেশন এবং লিক ডিটেকশনের জন্য এ পাইপ লাইনের সঙ্গে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযুক্ত থাকবে। প্রতিবছর পাইপলাইন পরিচালনা থেকে প্রায় ২২৭.৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপদে এবং কম খরচ ও সময়ে জ্বালানি তেল পরিবহনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকা তেল পাইপলাইন প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পাইপলাইন চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে।

চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। দেশের মোট জ্বালানি তেলের ৯০ শতাংশ তেল পরিবহন হয় নৌপথে। বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর প্রায় ২০০টি কোস্টাল ট্যাঙ্কার নিয়োজিত রয়েছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুলতার কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। তবে অদূর ভবিষ্যতে চাহিদার বিপরীতে নৌপথে দ্রুত পরিবহন সম্ভব হবে না। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে প্রায় নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। তাতে স্বাভাবিক জ্বালানি তেল পরিবহন বিঘ্নিত হয়।

বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে মোট ব্যবহার হয় ৪২ শতাংশ। যার পুরোটাই চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুর ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে পরিবহন করা হয়। এছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলো শ্যালো ড্রাফট ট্যাঙ্কারযোগে উত্তরবঙ্গের বাঘাবাড়ি, চিলমারী ও সাচনা বাজার ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠায়।

নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহনে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। অবরোধ, ধর্মঘটের মত কর্মসূচিতে ব্যাহত হয় জরুরি এ জ্বালানি পরিবহন। এসব বিবেচনায় নিয়ে জ্বালানি তেলের সাশ্রয়ী ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি বিগত ২০১৬ সালের অক্টোবরে একনেক-এ পাস হয়। তখন প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হয়ে চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এলপিই কোটেড পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। চট্টগ্রামের গুপ্তখাল থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল-ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইন হবে। এর পাশাপাশি কুমিল্লা ডিপো থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত আরও ৬০ কিলোমিটার একটি শাখা পাইপলাইন বসানো হবে। সেই পাইপলাইন দিয়ে চাঁদপুর ডিপোতে যাবে জ্বালানি তেল। চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন দিয়ে দেশের মোট জ্বালানির প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবহন করা হবে। বছরে ৫০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে। তবে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী আপাতত ৩০ লাখ মেট্রিক টন সরবরাহ করা হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!