কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ক্যাম্পগুলোতে ১১৫ জন খুন হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রায় দেড় হাজারের বেশি মামলা হয়েছে।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতেই এসব খুন করছে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। আর তাদের বেশিরভাগ টার্গেট হচ্ছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতারা—এমন অভিযোগ খোদ রোহিঙ্গা নেতাদের।
ক্যাম্পগুলোতে গত তিন মাসেই খুন হয়েছে ১৫ খুন।রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি এখানকার স্থানীয়রাও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আনোয়ার, মৌলভী ইউনুস ও সৈয়দ হোছন নামের তিনজনকে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে আনোয়ার ও মৌলভী ইউনুস রোহিঙ্গা নেতা।
জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই বেড়েছে খুন, মারামারি, চোরাচালান, মাদক ব্যবসাসহ নানান অপরাধ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, গত ৩ মাসে কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন হয়েছে ১৫ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি) রয়েছেন। এছাড়া ৫ বছরে খুন হয়েছে ১১৫ জন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে দেড় হাজারেও বেশি।
আরও জানা গেছে, মাদক ব্যবসা, চোরাচালানসহ নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। সরকার যদি দ্রুত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত না পাঠায় এবং অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে দুই উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে।
এদিকে ক্যাম্পের একাধিক রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ক্যাম্পের মধ্যে সারারাত সক্রিয় থাকে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের ভারী অস্ত্রের ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসীদের মিয়ানমার সরকার গোপনে মদদ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অনেক রোহিঙ্গা নেতা।
তবে এপিবিএন পুলিশের দাবি, সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তিনটি ইউনিট। সেইসঙ্গে ক্যাম্পে রয়েছে বাড়তি সর্তকতাও।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানান, ক্যাম্পে এপিবিএনের উদ্যোগে পাড়ায় ও পাহাড়ে স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে পাহারা বসিয়েও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। পাহারায় থাকার পরও হত্যাকাণ্ড কমছে না। ক্যাম্পের পাহাড়কেন্দ্রিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখনও সক্রিয়।
উখিয়ার কুতুপালং এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান ক্যাম্পের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। প্রতিদিন ঘটছে খুনের ঘটনা। কিন্তু সন্ত্রাসীরা সেভাবে গ্রেপ্তার হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।’
‘কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলন’র সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে ক্যাম্পে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মাঝে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় তা ম্লান করতেই ক্যাম্পে নতুন করে নাশকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে এসব ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’
৮ এপিবিএন’র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে কিছু দুষ্কৃতকারী জিরো লাইন থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে নাশকতা সৃষ্টি করছে। তারা বিশেষ করে আধিপত্য বিস্তার করেতে গিয়ে মাঝিদের টার্গেট করে হত্যা করছে।’
এ বিষয়ে এপিবিএন তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি।
ডিজে