পাঁচলাইশ থানায় নতুন কাণ্ড, ওসি নাজিম ‘ভুল’ স্বীকার করে পার পেলেন

ওসির অপেশাদার আচরণে বিস্ময়, দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

গৃহবধূর ভূমি দখলে ভূমিদস্যু চক্রকে সহায়তা দেওয়া, মাদক-জুয়াকাণ্ডে মাসোহারা নেওয়ার ঘটনায় সমালোচিত চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ মডেল থানা এবার অস্বাভাবিক এক ঘটনার জন্ম দিয়ে আবার আলোচনায় এলো। নানা ঘটনায় বিতর্কিত ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার এবার আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন।

পাঁচলাইশ থানায় নতুন কাণ্ড, ওসি নাজিম ‘ভুল’ স্বীকার করে পার পেলেন 1

জানা গেছে, আদালতের আদেশে মামলা রুজু হয় আর সেই আদেশ অনুযায়ী বাদী হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। সেই মামলাতেই এজাহার জমা নেয়নি পাঁচলাইশ থানা। অথচ এজাহার ছাড়া মামলা দায়েরের সুযোগই নেই। এতে আইনগত ত্রুটি রয়ে যায়। এমন অস্বাভাবিক ঘটনায় শেষপর্যন্ত আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার।

আইনজীবীরা বলছেন, মামলা গ্রহণের শুরুতে এজাহার নিতেই হবে। এরপর এজাহার অনুযায়ী ওসি এফআইআর ফরম পূরণ করবেন। যদি এজাহার না নেওয়া হয়, তাহলে সেটি মামলা বলেই গণ্য হবে না।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি নালিশি মামলা দায়ের করেন হোসনে আরা বেগম নামে এক নারী।

ওই মামলার অভিযোগে ৩৭ বছর বয়সী হোসনে আরা বেগম বলেন, ৯ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। এরপর থেকে তিনি অর্থকষ্টে দিনযাপন করছেন। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে রাশেদা আক্তার নিখোঁজ হয়। ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল তিনি জানতে পারেন মো. রাশেদ ও তার স্ত্রী ফারজানা রাশেদাকে তাদের কাছে আটকে রেখেছেন এবং তারা রাশেদাকে দিয়ে অমানবিক কাজ করাচ্ছেন।

মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের আদেশ দেন আদালত। এরপর মামলাটি তদন্ত করেন পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহেদুজ্জামান চৌধুরী। 

তবে তদন্তে উঠে আসে বিপরীত তথ্য। সেই তদন্তে জানা যায়, রাশেদাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করতেন তার মা হোসনে আরা। বেশি পরিমাণে ভিক্ষা পাওয়ার আশায় রাশেদার গায়ে পলিথিন পুড়িয়ে ছ্যাঁকা দিতেন তার মা। একপর্যায়ে ছেলের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে রাশেদাকে একটি বাড়িতে কাজ করতে দেন হোসনে আরা। সেখানে ভালোভাবে জীবনযাপন করছিল রাশেদা। কিন্তু রাশেদাকে আবারও ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানোর চেষ্টা করেন মা হোসনে আরা। নালিশি মামলার অভিযুক্তরা (মো. রাশেদ ও তার স্ত্রী) তাতে বাধা দেন। এ কারণে হোসনে আরা আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে আদালতে একই ধরনের জবানবন্দি দেন ভুক্তভোগী রাশেদাও।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগে মা হোসনে আরার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। আদেশে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মর্যাদার কর্মকর্তাকে বাদী হতে বলা হয়। একইসঙ্গে পরিদর্শক মর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।

আদালতের আদেশ পেয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করা হয়। পাঁচলাইশ থানার এসআই নুরুল আলম মামলাটির বাদি হন। তবে এই মামলার কোনো এজাহার জমা দেননি তিনি। শুধু প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) ফরম পূরণ করে আদালতে জমা দেওয়া হয়।

পাঁচলাইশ থানার এসআই নুরুল আলম ও ওসি নাজিমের এমন অপেশাদার আচরণের বিষয়টি আদালত ও আইনজীবীদের নজরে এলে সমালোচনা তৈরি হয়। বিশেষ করে ওসির দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

এরপর গত ডিসেম্বর মাসে এ ব্যাপারে ‘ভুল’ স্বীকার করে আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার। সেই সঙ্গে নতুন করে লেখা একটি এজাহার জমা দিয়ে সেটি মামলার নথিতে সংযুক্ত করার আবেদনও করেন তিনি।

এর আগে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে বালু ভরাটে ভূমিদস্যু চক্রকে সহযোগিতার অভিযোগ উঠে খোদ পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার ও এসআই মো. ইলিয়াছের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় গত ১৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বরাবরে ওসি-এসআইসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় দিনরাত মাদক থেকে জুয়া, ছিনতাই থেকে যৌনবাণিজ্যে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়রা জানান, পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা রেলস্টেশনে সুযোগ বুঝে ছিনতাইয়েও জড়িয়ে পড়ছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!